৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি, প্রশাসনিক ভবনে তালা

৯ দফা দাবিতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। আজ সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করা হয়। এ ছাড়া বেলা ১২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এর আগে একই দাবি নিয়ে সকাল ১০টার দিকে রুয়েটের শহীদ মিনারে জমায়েত হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তাঁরা ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন। পরে তাঁরা বেলা ১১টার দিকে প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান নেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে দাবি মানার আশ্বাস জানিয়ে সেখানে উপস্থিত হন রুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক রবিউল ইসলাম সরকার, তবে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা জানান, রুয়েটে কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। এর সম্পূর্ণ দায় শিক্ষকদের। তাঁরা ঠিকমতো ক্লাস নেন না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তাঁদের কারণে স্বপ্ন নিয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থী ঝরে যাচ্ছেন।

আশরাফুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পাঠানো হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ার বানাতে, কিন্তু তাঁরা ফিরেছেন লাশ হয়ে। বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলে মেনে নিতাম। কিন্তু এটা বারবার ঘটছে। এ জন্য রুয়েটের পরিবেশ দায়ী। এটা কে তৈরি করেছে? আমরা শিক্ষকের বিরুদ্ধে নই; সেই কুলাঙ্গারের বিরুদ্ধে, যাঁরা শিক্ষকের যোগ্যতাই রাখেন না। আমরা আপনাদের সম্মান দেব। কিন্তু যাঁরা ছাত্রদের জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পান, তাঁদের সমূলে উৎপাটন করতে চাই।’

শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবিগুলো হলো পরবর্তী সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার খাতায় কোডিং সিস্টেম চালু করতে হবে, যাতে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়, এ–বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে; সেমিস্টারের রেজাল্ট ও গ্রেডশিট দ্রুত প্রকাশ করতে হবে ও খাতা রিভিউ করার সুযোগ দিতে হবে; রুয়েটের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে গত ফ্যাসিস্ট আমলে বিভিন্ন অভিযোগ আছে, তাঁদের অনতিবিলম্বে সাময়িক বহিষ্কার ও তদন্ত সাপেক্ষে স্থায়ী বহিষ্কার করে আইনত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া ছাত্রলীগের পদধারী নেতাদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে; শিক্ষকদের নিয়মিত ক্লাস পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে। তিন থেকে চার দিনের ক্লাস নিয়ে পুরো সেমিস্টারের উপস্থিতি গণনা করা যাবে না। যদি শিক্ষকের ব্যস্ততা/অনুপস্থিতির কারণে কোনো ক্লাস মিস যায়, তবে সে ক্ষেত্রে সব শিক্ষার্থীকে ওই দিনের অ্যাটেনডেন্স দিতে হবে এবং কোনোদিন এক্সট্রা ক্লাস নিলে তা একটা ক্লাসের অ্যাটেনডেন্স হিসেবে কাউন্ট করতে হবে; প্রতি মাসে প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা সেশন আয়োজন করতে হবে, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের নিয়ে প্রতি মাসে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সেমিনার আয়োজন করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মধ্যে আরও আছে, নগরের হজোর মোড়ের ঘটনায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি, অতি দ্রুত সেই মামলার বাকি কার্যক্রম শুরু করতে হবে এবং রুয়েট ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে; ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্য করার দায়ে গোলাম মোস্তাকিম ও সিভিল ফ্যাকাল্টির ডিন কামরুজ্জামান রিপনসহ অভিযুক্ত সব শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের প্রতি সদাচরণ করতে হবে এবং শিক্ষকদের কার্যক্রমের মূল্যায়ন ও জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকতে হবে। অনতিবিলম্বে গত আগস্টে জমাকৃত ১২ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে।

১০ জানুয়ারি রাতে নগরের একটি ছাত্রাবাস থেকে রুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (ইউআরপি) বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের (২৪) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রুয়েটে গত দুই বছরে তিন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে।