‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের বেশি ছিল নারী’

বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। আজ সোমবার সন্ধ্যায় বরিশাল সদর রোডের কীর্তনখোলা মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের বেশি ছিলেন নারী। কিন্তু নতুন বাংলাদেশেও নারী নির্যাতন-ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না। নারীর জন্য নিরাপদ বিকাশের পরিবেশ নিশ্চিত হচ্ছে না, নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন বিলোপ হচ্ছে না।

আজ সোমবার বিকেলে বরিশাল নগরের সদর রোডের কীর্তনখোলা মিলনায়তনে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে বেগম রোকেয়া দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে সদর রোডের অশ্বিনীকুমার হল চত্বরে শ্রদ্ধাঞ্জলি, শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।

বক্তারা বলেন, বেগম রোকেয়া যে সমতার সমাজের স্বপ্ন দেখেছেন, তা নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই নারীর জন্য সমমজুরি, সম্পত্তিতে সমান অধিকার, নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বক্তারা বেগম রোকেয়ার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নারী অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

বক্তারা বলেন, বেগম রোকেয়া উপমহাদেশে নারী জাগরণের অগ্রদূত ছিলেন। নারীশিক্ষা বিস্তারে তাঁর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে ও ২৯ বছর বয়সে বিধবা হয়ে বেগম রোকেয়া বুঝেছিলেন সমাজে নারীরা কতটা নিগৃহীত। ১৯১১ সালে বেগম রোকেয়া মাত্র আটজন ছাত্রী নিয়ে কলকাতার অলিউল্লাহ লেনে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। মেয়েদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি তৎকালীন সামাজিক প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নারীশিক্ষার প্রচার করতেন ও স্কুলের জন্য ছাত্রী সংগ্রহ করতেন। নারী অধিকার নিয়ে বেগম রোকেয়ার লেখায় তিনি নারী অধিকারের পাশাপাশি সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন। সমাজের অর্ধেক অংশ নারীদের পিছিয়ে রেখে সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়—এ কথা তিনি প্রচার করে সমাজের অগ্রগতি ও নারীমুক্তি যে একসূত্রে গাঁথা, তা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন।

সভায় বাসদ নেতা মনীষা চক্রবর্তী বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজপথে সরাসরি নারীরা সাহসিকতার সঙ্গে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের বেশি ছিলেন নারী। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বেগম রোকেয়ার স্মৃতিকে আড়ম্বরে স্মরণ করার বদলে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়ার ম্যুরালে কালি লেপনসহ নানা ঘটনা ঘটছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এবারে বরিশালেও ছাত্র ফ্রন্ট ও মহিলা ফোরামের রোকেয়া দিবসের ঘোষিত কর্মসূচিতে একটি সংগঠন অশ্বিনীকুমার হলের চত্বরে কর্মসূচি রেখেছে, যা বেগম রোকেয়ার কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার হীন চক্রান্তমাত্র। তিনি অশ্বিনীকুমার হলে বেগম রোকেয়াকে স্মরণ করার আয়োজনকে বাধাগ্রস্ত করার এই প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানান।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি মাফিয়া বেগম। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বরিশাল মহানগর শাখার অর্থ সম্পাদক সুজন শিকদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী, বাসদের কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরামের সদস্য ইমাম হোসেন, কড়াপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সোনালী কর্মকার, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম বরিশাল জেলা শাখার সহসভাপতি শিক্ষক রিতা ব্যাপারী, সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক শম্পা ঘোষ, শ্রমজীবী নারী সংগঠক তাহমিনা আক্তার প্রমুখ।

আলোচনা সভা শেষে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আয়োজনে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট আয়োজিত ‘তোমার ভাবনায় রোকেয়া’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়।