কর্ণফুলী টানেলের পূর্তকাজের সমাপ্তি ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থেকে কর্ণফুলী টানেলের পূর্তকাজের সমাপ্তি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম যোগাযোগ পথের (টানেল) একটি সুড়ঙ্গের (টিউব) পূর্তকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই সুড়ঙ্গ চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে নগরের পতেঙ্গা প্রান্তে এসে শেষ হয়েছে। আজ শনিবার সকালে এই পূর্তকাজের সমাপ্তি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।

পূর্তকাজ সমাপ্তি উপলক্ষে আজ সকালে টানেলের চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা প্রান্তে উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে এটাই প্রথম টানেল। এটি একটা বিস্ময়। এটি আমাদের জন্য বিরাট কাজ। তাই সরাসরি দেখার আগ্রহ ছিল। দেখে আসতে পারলে ভালো হতো। এখন মন পড়ে আছে চট্টগ্রামের টানেলে।’

আরও পড়ুন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, টানেলের কারণে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। এটি বিরাট অর্জন। টানেলের কারণে কর্ণফুলী নদীর দুই প্রান্ত সমানভাবে উন্নত হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষ করে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে পরিকল্পিতভাবে শিল্পায়ন ও নগরায়ণ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। টানেলের মাধ্যমে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে উঠবে।

পূর্তকাজের উদ্‌যাপন উপলক্ষে টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে মঞ্চ তৈরি করা হয়। এই প্রান্তে সাজসজ্জা করা হয়েছে। ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডে টানেলের বিভিন্ন কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন সেতু বিভাগে সচিব মো. মনজুর হোসেন।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের আগে টানেলের ভেতরে ভার্চ্যুয়ালি সফরের আয়োজন করা হয়েছে। এতে টানেলের ভেতরের চিত্র দেখানো হয়।

সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, দক্ষিণের কাজ শেষ হলেও উত্তর সুড়ঙ্গের (পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী) পূর্তকাজসহ টানেলের বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক (ইলেকট্রো মেকানিক্যাল) কাজ বাকি। এসব কাজ আগামী জানুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা। এ ছাড়া টানেলের উভয় প্রান্তে স্ক্যানার বসানো হবে। এ ছাড়া সার্ভিস এরিয়া (কার্যালয়সহ আবাসিক) ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ এখনো বাকি। এরপর যান চলাচলের উপযোগী হবে টানেল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী প্রথম বা উত্তর সুড়ঙ্গের খননকাজের উদ্বোধন করেন। ২ হাজার ৪৪৬ মিটার দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গের খননকাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ২ আগস্ট। দ্বিতীয় বা দক্ষিণ সুড়ঙ্গের (আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী) খননকাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর। গত বছরের ৭ অক্টোবর এই কাজ শেষ হয়। আর দুটি সুড়ঙ্গের মধ্যে তিনটি ক্রস প্যাসেজ বা সংযোগপথের কাজও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।

দেশের প্রথম টানেলের নামকরণ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। সেতু কর্তৃপক্ষের অধীনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে চীনের চায়না কমিউনিকেশনস ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসিএল) লিমিটেড।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, টানেলের দুটি সুড়ঙ্গের ভেতরে রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আবার দুটি সুড়ঙ্গের মধ্যে যোগাযোগের জন্য তিনটি ক্রস প্যাসেজ বা সংযোগ সড়কের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এখন বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক কাজগুলো চলছে। এগুলোর অগ্রগতিও সন্তোষজনক।

প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন (২৪ নভেম্বর) পর্যন্ত প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ৯৪ শতাংশ। ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। মূল টানেলের বাইরে দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক রয়েছে ৫ দশমিক ৩৫০ কিলোমিটার। এই সংযোগ সড়কের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।

এখন টানেলের ভেতরে অগ্নি প্রতিরোধক বোর্ড, ডেকোরেটিভ বোর্ড স্থাপনের কাজ চলছে। এ ছাড়া সুড়ঙ্গের ভেতরে বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক কাজ চলমান। টানেলের দুই প্রান্তে ১৫ মেগাওয়াটের একটি করে দুটি সাবস্টেশন থাকবে।

আরও পড়ুন

সেগুলো স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। টানেলের পশ্চিম (পতেঙ্গা) ও পূর্ব (আনোয়ারা) প্রান্তে দুই মেগাওয়াট সাময়িক বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সার্ভিস এরিয়ায় বাংলো, দুটি সেতু, ড্রেনেজব্যবস্থা ও অভ্যন্তরীণ সড়কের নির্মাণকাজ চলমান। এখন পর্যন্ত সার্ভিস এরিয়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫৮ শতাংশ।

প্রকল্প সূত্র জানায়, মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দুই সুড়ঙ্গে দুটি করে মোট চারটি লেন রয়েছে। আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়ালসড়ক। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩৬ মিটার গভীরতায় সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার। টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।