মাদারীপুরে আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে পুকুরে ফেলে দিল ছাত্রলীগ
মাদারীপুরের রাজৈরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আবদুস সালামকে (৫০) মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
মারধরের পর ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজৈর উপজেলা পরিষদের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলা একটার দিকে জমি রেজিস্ট্রি করা জন্য নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আবদুস সালাম। কার্যালয়ে ঢুকতেই তাঁর মোটরসাইকেলের গতি রোধ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান ওরফে পিয়াল। পরে হাসিবুলের ভাই আশিকুর রহমান ওরফে পাভেলসহ ১০ থেকে ১২ জন মিলে খন্দকার আবদুস সালামকে বেদম পিটুনি দেন। একপর্যায়ে হাত-পা ধরে তাঁকে উপজেলা চত্বরের পুকুরে ফেলে দেন। এ সময় তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, শোক দিবস উপলক্ষে গত বছরের ৩১ আগস্ট উপজেলার খালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় খন্দকার আবদুস সালাম উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক অংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা হাসান ওরফে পল্লবীর সমালোচনা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর ফরিদা হাসান বাদী হয়ে খন্দকার আবদুস সালামসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগে মামলা করেন। এরই জেরে ফরিদার উপস্থিতিতে তাঁর দুই ছেলেসহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে একা পেয়ে পিটুনি দেন।
খন্দকার আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ আমার একটি জমির দলিল হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের অফিসে যাই। প্রবেশ করার পরপরই পল্লবীর (ফরিদা) উপস্থিতিতে আমার ওপর হামলা করে তাঁর ছেলেরা। আমাকে মেরে পুকুরে ফেলে দেয়। পুকুরের পানির মধ্যেও ওরা আমাকে মার শুরু করে। আমার পরনে পায়জামা ছাড়া সব ছিঁড়ে ফেলেছে। পরে আমার মোটরসাইকেলটিও পুকুরে ফেলে দেয়। আমার পকেটে দলিল খরচের দুই লাখ টাকা, একটি সোনার চেইন, হাতঘড়ি, মুঠোফোন ছিল। মারধরের সময় আমার কাছে যা ছিল, ওরা সব নিয়ে গেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (সালাম) সিনিয়র মানুষ, তাঁকে কেন মারধর করব? আমি রাজনীতি করি, তাই আমার দিকে যে কেউ আঙুল তুলতেই পারে। আমি যখন উপজেলায় যাই, দেখি তিনি পুকুরের ভেতরে। তাঁকে পুকুর থেকে তুলেছি, সমস্যার কথা শুনেছি। পরে যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খালিদ ভাই তাঁকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। আমি শুনেছি, তিনি (সালাম) কোনো এক লোকের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে পড়ে গেছেন। তার আগে কিছু ঘটছে কি না, আমি জানি না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পল্লবী (ফরিদা) ও তাঁর ছেলে পিয়াল (হাসিবুল হাসান), তাঁরা কেউ আওয়ামী লীগ বা কোনো সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে নেই। তাঁরা স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান লীগের কর্মী। তাঁরাই উপজেলায় মারামারি করে পরিবেশ নষ্ট করছেন। দলে না থেকেও দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র এক নেতাকে মেরে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে ফেলে দেওয়া জঘন্যতম দুঃসাহস। আমরা আইনিভাবে এর বিচার দাবি করছি। একই সঙ্গে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় ঘোষ বলেন, রাজৈরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। একটি পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির, অন্যটি স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের। মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা সভাপতির অনুসারী। তাঁকে যাঁরা মারধর করেছেন, তাঁরা সংসদ সদস্যের অনুসারী। মারধরের শিকার খন্দকার আবদুস সালামের গুরুতর তেমন আঘাত নেই। তবে তাঁকে চড়থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারা হয়েছে। তাঁর হার্টে ওপেন সার্জারি করা। তাই তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।