ঘুমন্ত সন্তানদের বের করতে গিয়েছিলেন মা, আগুনে পুড়ে মরলেন তিনজন
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় শোয়ার ঘরে আগুনে পুড়ে মা ও দুই শিশুসন্তানের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বাবাসহ দুজন। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলার খাকসা উত্তরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত দুজনকে উদ্ধার করে প্রথমে বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মৃত তিনজন হলেন উপজেলার খাকসা উত্তরপাড়া গ্রামের ওয়ালিউল্লাহর স্ত্রী সোমা খাতুন (২৮), মেয়ে অমিয়া খাতুন (৮) ও ছেলে ওমর আলী (৩)। আহত হয়েছেন বাবা ওয়ালিউল্লাহ (৩৫) ও তাঁর বন্ধু আনোয়ার হোসেন (৪২)।
এলাকাবাসী ও বড়াইগ্রাম থানা সূত্রে জানা যায়, দুই সন্তান ঘুমিয়ে পড়ার পর নামাজ আদায় করছিলেন সোমা খাতুন। রাত নয়টার দিকে তাঁর স্বামী ট্রাকচালক ওয়ালিউল্লাহ বন্ধু আনোয়ারকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে আসেন। তাঁদের খাবার দেওয়ার জন্য সোমা শোয়ার ঘরের পাশে রান্নাঘরে যান। সেখানে খাবার গরম করার সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয় এবং দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে শুরু করে। ওয়ালিউল্লাহ ও আনোয়ার আগুন নেভাতে যান। ততক্ষণে রান্নাঘরের আগুন শোয়ার ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। সোমা ঘুমন্ত সন্তানদের ঘর থেকে বের করতে যান। তিনজনই আগুনে পুড়ে মারা যান।
প্রতিবেশী রওশনারা বেগম বলেন, বিকট শব্দ ও চিৎকারে তিনিসহ গ্রামের কয়েকজন ওয়ালিউল্লাহর বাড়িতে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে।
বড়াইগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মমিন আলী বলেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে একটি টিনের ঘরের তিনটি কক্ষ পুড়ে গেছে।
খবর পেয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহম্মেদসহ পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা রাতেই ঘটনাস্থলে যান। সেখানে নাটোর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক এ টি এম মোর্শেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত। ঘরের মধ্যে একটি খালি ও গ্যাসভর্তি একটি সিলিন্ডার ছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফ আল রাজিব বলেন, পরিবারের আবেদনে পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক শামীম আহম্মেদ বলেন, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহন করা হবে। নতুন করে ঘর বানিয়ে দেওয়া হবে।