২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

‘ইচ্ছা ছিল ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে, এখন জঙ্গির খাতায় নাম দেখে কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে’

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে গত শনিবার জঙ্গি সন্দেহে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

‘সন্তানদের মানুষ করতে জীবনের দীর্ঘ সময় প্রবাসে কাটিয়েছি। ইচ্ছা ছিল ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। সেটি সম্ভব হয়নি। তবু কখনো হতাশ হইনি। তবে এখন জঙ্গির খাতায় নাম দেখে বড় হতবাক লাগছে। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।’ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে গত শনিবার জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ১০ জনের একজন রাফিউল ইসলামের (২২) বাবা সাইফুল ইসলাম এসব কথা বলছিলেন।

রাফিউলের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মাইজবাড়ী গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও রেবা সুলতানা দম্পতির ছেলে। তাঁর বাবা দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন আর মা মাইজবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত ৪, ৫ ও ৬ নম্বর মহিলা ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। দুই ভাই-বোনের মধ্যে রাফিউল বড়।

রাফিউলের পরিবার জানায়, তিনি ২০১৮ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং ২০২০ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান। বুয়েট, মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন। তবে তিনি কোনোটিতেই সুযোগ পাননি। পরে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে শহীদ এম মনসুর আলী সরকারি কলেজে প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে স্নাতক (সম্মানে) ভর্তি হন রাফিউল। পড়ালেখার পাশাপাশি আট মাস আগে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে পাবনা শহরতলির তালিমুল একাডেমি নামে একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন। সেখানেই একটি কক্ষে অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে থাকতেন।

ছেলে যেদিন চলে গেল, সেই রাতে আমার হার্ট অ্যাটাক হয়। আমার একমাত্র ছেলেকে অসুস্থতার সময় কাছে পাইনি। এখন জঙ্গিদের সঙ্গে দেখে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।
সাইফুল ইসলাম

রাফিউলের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ৪ আগস্ট সকালে পাবনার তালিমুল একাডেমিতে যাওয়ার কথা বলে রাফিউল বাড়ি থেকে বের হন। মাকে বলেন, আলাদা কোচিং সেন্টার খুলবেন। দু-এক দিনের মধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজারে যেতে পারেন। মুঠোফোনে না পেলে যেন চিন্তা না করেন।

আরও পড়ুন

সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ছেলে যেদিন চলে গেল, সেই রাতে আমার হার্ট অ্যাটাক হয়। আমাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে সাত দিন চিকিৎসা দেওয়া হয়। তখন ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। আমার একমাত্র ছেলেকে অসুস্থতার সময় কাছে পাইনি। এখন জঙ্গিদের সঙ্গে দেখে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’

এই পরিবারের সদস্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হবে, এমনটা ভাবতেই পারি না। রাফিউলের মা দীর্ঘদিন আমাদের ইউপির সদস্য ছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত হোসেন, চেয়ারম্যান, মাইজবাড়ী ইউপি

আক্ষেপ করতে করতে রাফিউলের বাবা বলতে থাকেন, ‘আমার পুরো পরিবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করি। আমার সন্তান জঙ্গি হবে, এটি আমি কেমনে বিশ্বাস করব? আমার দুই সন্তান পড়ালেখায় খুব ভালো। মেয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তাদের কথা চিন্তা করে ২০টি বছর প্রথমে মালয়েশিয়া ও পরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজ করলাম। আজ আমারই এমন অবস্থা হলো!’

আরও পড়ুন

রাফিউলের মা সাবেক ইউপি সদস্য রেবা সুলতানা বলেন, ‘আমার ছেলে ছোটবেলা থেকে সাদাসিধে, ধর্মপরায়ণ। সে ভালো ছাত্র। তবে কেন ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেল না, তা আমরা বুঝতে পারি না। এখন বলা হচ্ছে, সে জঙ্গি। কেমনে বিশ্বাস করব!’

মাইজবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই পরিবারের সদস্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হবে, এমনটা ভাবতেই পারি না। রাফিউলের মা দীর্ঘদিন আমাদের ইউপির সদস্য ছিলেন। এমন একটি ভালো পরিবারের সন্তান এমন হবে, ভাবতেই অবাক লাগে।’

আরও পড়ুন

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কুলাউড়ার পূর্ব টাট্টি উলি গ্রামের যে বাড়ি থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র সদস্য। অপারেশন হিলসাইড নামের এই অভিযানে সংগঠনের প্রধানসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়। তার মধ্যে চারজন পুরুষ এবং ছয়জন নারী। এ ছাড়া তিনটি শিশু ছিল বাড়িটিতে। অভিযানে ৩ কেজি বিস্ফোরক, ৫০টি ডেটোনেটর, ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ও জঙ্গি প্রশিক্ষণসামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।