পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ চলছে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের এক দফা দাবিতে নবম দিনের মতো ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে অবরোধের শুরুতে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অবরোধ কর্মসূচি সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

আরও পড়ুন

আজ বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখান থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গেলে প্রক্টরিয়াল টিমের বাধার মুখে পড়ে। পরে আন্দোলনকারীরা প্রধান ফটক পার হলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে অন্তত ১৫ মিনিট বাগ্‌বিতণ্ডার পর শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় প্রধান ফটক এলাকায় অন্তত পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য অবস্থান করতে দেখা যায়।

পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁদের এক দফা দাবি না মানা পর্যন্ত অবরোধ চলবে। এর আগে গতকাল বুধবার আট ঘণ্টা, মঙ্গলবার আধা ঘণ্টা, সোমবার সোয়া চার ঘণ্টা এবং রোববার দুই ঘণ্টা; গত সপ্তাহের ৪ জুলাই ৩৫ মিনিট এবং ৩ জুলাই পৌনে দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া ২ জুলাই ২০ মিনিট ও ১ জুলাই ১০ মিনিট সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

অবরোধ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, ‘আমরা সব ধরনের অন্যায্য কোটা বাতিল করে এটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পুলিশ বাহিনী আমাদেরকে বাধা দিয়ে থামাতে চায়। স্পষ্ট করে বলতে চাই, হামলা-মামলা করে পুলিশ দিয়ে আমাদের আন্দোলন দমানো যাবে না।’

অবরোধ কর্মসূচি সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে
ছভি: প্রথম আলো

বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘আমাদের আজকের কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। পুলিশ আসলে কার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে? প্রশ্নপত্র ফাঁসের হয়ে নাকি সাধারণ জনগণের হয়ে? পুলিশ সাধারণ মানুষের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে থাকলে আজকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে বহর নিয়ে এসে বাধা দিত না। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের ব্যাপারে পুলিশের তৎপরতা নেই। তা–ই যদি হতো, তাহলে এতক্ষণে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের যথাযথ আইনের আওতায় আনত। পুলিশ সব সময় সাধারণ জনগণের যৌক্তিক আন্দোলনের ওপর হামলা চালায়। তারা যদি ছাত্রশক্তির কথা ভুলে গিয়ে থাকে, তাহলে মনে করিয়ে দিতে চাই, পুলিশের সব বাধা উপেক্ষা করার মতো ক্ষমতা ছাত্রদের রয়েছে।’

আরও পড়ুন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক এলাকায় অন্তত পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য অবস্থান নিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) মো. আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ‘এই মহাসড়ক অবরোধ করলে অসুস্থ মানুষ, রোগী ছাড়াও উত্তরবঙ্গগামী মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হয়। এসব ভোগান্তি এড়াতে মহাসড়ক অবরোধ না করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ করেছি। রাস্তা অবরোধ করে আমাদের জনগণ ও যানবাহনের যে ক্ষতি হয়, সেটি দেশের সামগ্রিকভাবে ক্ষতি হয়। ছাত্র ভাইদের প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা ধৈর্য ধরে আদালতের দেওয়া একটি মাস অপেক্ষা করুন, রায় নিশ্চয়ই আপনাদের পক্ষে আসবে।’

আরও পড়ুন