রাজশাহীতে দপ্তরে বসে খাম আদান-প্রদান করা সেই ওসিকে প্রত্যাহার
রাজশাহীতে নিজ দপ্তরে খাম আদান-প্রদান করার ভিডিও ফাঁস হওয়া নগরের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলমকে আজ শনিবার দুপুরে প্রত্যাহার করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জামিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওসির খাম আদান-প্রদানের ঘটনাটি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে এসেছে। এতে একজন পুলিশ কর্মকর্তার অপেশাদারির বিষয়টি প্রতীয়মান হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাঁকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্তে ঘটনাটি প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার নিজ দপ্তরে বসে এক ব্যক্তির সঙ্গে ওসি মাহবুব আলমের খাম আদান-প্রদানের একটি ভিডিও ফাঁস হয়। এ নিয়ে গতকাল রাতেই প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘রাজশাহীতে দপ্তরে বসে ওসির “খাম” আদান-প্রদানের ভিডিও ফাঁস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বোনের সহকর্মীকে ফাঁসাতে চন্দ্রিমা থানায় করা মিথ্যা মামলার জন্য ওসি মাহবুব আলমকে ঘুষ দেন এক ভাই। পরিকল্পিতভাবে সেই ঘুষ দেওয়ার ভিডিও ধারণ করে রাখা হয়, যাতে পরে ভিডিও দেখিয়ে পুলিশকে জিম্মি করে কাজ করানো যায়। গতকাল ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। ভিডিওতে যে ব্যক্তি ওসিকে খামে ঘুষ দিচ্ছিলেন, তাঁর নাম মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্বাস। তাঁর বোনের নাম রুবানা ফেরদৌস। তিনি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মেকানিক্যাল শাখার ট্রেসার পোস্টে কর্মরত। রুবানা ফেরদৌস মামলার কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।
গত ২০ মে রুবানা ফেরদৌস (৩৫) তাঁর কার্যালয়ের সহকর্মী মেকানিক্যাল শাখার ফেরো প্রিন্টার আব্দুল খালেক শিকদারের (৫৫) বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৭ মে আব্দুল খালেক শিকদার তাঁদের দপ্তরে রুবানাকে শ্লীলতাহানি করেন। মামলায় তাঁরই কার্যালয়ের অন্য চার সহকর্মীকে সাক্ষী করা হয়। তবে আসামিদের সবার দাবি, তাঁরা এমন ঘটনা দেখেননি বা জানেন না।
মামলায় গত ২৬ মে আব্দুল খালেক শিকদার গ্রেপ্তার হন। এখন তিনি জামিনে আছেন। এ ঘটনায় অসুস্থ হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। জানতে চাইলে খালেক বলেন, ‘আমি হার্টের রোগী। দুই ছেলে-মেয়ে। নাতি-নাতনিও আছে। আমার স্ত্রীও আমার অফিসে চাকরি করেন। রুমানাকে আমি মেয়ের মতো দেখি। সে তার মায়ের জমি লিখে নিতে আমাকে প্রথমে সাক্ষী হতে বলে। আমি না বলি। এরপর অ্যাসিস্ট্যান্ট মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুল হাসানকে সাক্ষী হতে বললে উনি আমার সঙ্গে পরামর্শ করে না করে দেন। এতে সে মনে করে আমি তাকে মানা করেছি। তা ছাড়া মাসুদুল হাসানকে সে বিয়ে করতে চায়। তাদের নিয়ে অনেকে কানাঘুষা করে। এটা নিয়েও আমি তাকে সতর্ক করেছিলাম। এসব বিষয় নিয়ে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মিথ্যা মামলা করেছে।’
মামলার তৃতীয় ও চতুর্থ সাক্ষী তানজিরা রহমান ও মো. হারুন জানান, তাঁরা অফিসে এমন কিছু হয়েছে বলে জানেন না। রুবানার মামলায় তাঁদের সাক্ষী করার ঘটনাতেও তাঁরা বিব্রত। তাঁরা বলেন, রুবানা ও মাসুদুল হাসানকে নিয়ে অফিসে বহুদিন ধরেই কানাঘুষা হচ্ছে। এটা নতুন বিষয় নয়।
মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী ও পশ্চিমাঞ্চল রেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এ টি এম মাসুদুল হাসান বলেন, ‘রুবানা মামলায় যে সময় ও ঘটনা উল্লেখ করেছে, আমার জানা নাই। আমি ওই সময় ছিলাম না। সে কেন আমাকে সাক্ষী করল, বুঝতে পারছি না।’ রুবানার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে বলেন, চার থেকে পাঁচটি পদ ফাঁকা থাকায় তাঁকে নিয়েই কাজ করতে হয়।