পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে তোলা হচ্ছে ‘সমাহিত’ মাহে আলমের লাশ
আদালতের নির্দেশের পর হিলটন নাথ হিসেবে সমাহিত মাহে আলমের লাশ তাঁর পরিবারকে হস্তান্তরের জন্য উত্তোলন করা হচ্ছে। সোমবার বেলা ১১টায় বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চিলা এলাকা থেকে লাশটি তোলা হবে। সোমবার আসরের নামাজের পর মোংলা পৌর শহরের বিএলএস জামে মসজিদে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
৮ নভেম্বর বাগেরহাটের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের বিচারক খোকন হোসেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে লাশ মাহে আলমের ছেলে সুমন রানার কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন।
মাহে আলম মোংলা উপজেলার কেওড়াতলা এলাকার বাসিন্দা। একসময় তাঁর মাছের ঘের ছিল। পাশের চিলা গ্রামে মাছ বিক্রির দোকান ছিল। বয়সের কারণে ব্যবসায় তেমন সক্রিয় ছিলেন না। অন্যদিকে হিলটন নাথ চিলা গ্রামের বাসিন্দা।
থানা-পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, হিলটন নাথ গত ৭ এপ্রিল সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন। অন্যদিকে ১০ এপ্রিল মোংলার ব্যবসায়ী মাহে আলম বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। ১৩ এপ্রিল সুন্দরবনের করমজলে একটি অজ্ঞাতপরিচয় লাশ পাওয়া যায়। হিলটন নাথের মা বীথিকা নাথের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ এপ্রিল খুলনার দাকোপ থানা-পুলিশ লাশটি তাঁর কাছে হস্তান্তর করে। হিলটন নাথ হত্যা ও মাহে আলম নিখোঁজের ঘটনায় দাকোপ ও মোংলা থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়।
কিন্তু মাহে আলমের পরিবারের লোকজন লাশটি মাহে আলমের বলে দাবি করেন। নিখোঁজ মাহে আলমের ছেলে সুমন রানার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল আমলি আদালত ‘গ’ অঞ্চল খুলনা; হিলটন হিসেবে সমাহিত লাশটির ডিএনএ পরীক্ষার আদেশ দেন। হিলটন নাথের মা বীথিকা নাথ ও সুমন রানার ডিএনএ পরীক্ষার পর জানা যায়, লাশটি মাহে আলমের। এ অবস্থায় আইনি প্রক্রিয়া শেষে ৬ মাস ২৩ দিন পর বুধবার দুপুরে বাগেরহাটের (মোংলা) জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খোকন হোসেন লাশটি তুলে ছেলে সুমন রানার কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন।
মাহে আলমের ছেলে সুমন রানা বলেন, ‘বাবার লাশ ফিরে পেতে টানা সাত মাসের বেশি সময় ধরে অবর্ণনীয় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি আমরা। নানা আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালত লাশটি আমাদের হস্তান্তরের আদেশ দেন। প্রশাসন থেকে আমরা সিদ্ধান্ত পেয়েছি, আগামীকাল বাবার লাশটি তুলে আমাদের দেওয়া হবে।’ তিনি তাঁর বাবাকে হত্যা এবং লাশ গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান।
হিলটন নাথ হত্যার বিষয়ে খুলনার দাকোপ থানায় এবং মাহে আলম নিখোঁজ বিষয়ে বাগেরহাটের মোংলা থানায় দুটি পৃথক মামলা হয়। ওই দুটি মামলা এখন তদন্তাধীন। তবে ৬৫ বছর বয়সী মাহে আলমের মরদেহ কীভাবে কাদের কারণে ২০ বছরের হিলটনের হয়ে গেল, তা নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মোংলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইমরান হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সোমবার হিলটন নাথের বাড়ি থেকে মাহে আলমের লাশটি তুলে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। মোংলা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হাবিবুর রহমান এ সময় উপস্থিত থাকবেন।