চট্টগ্রাম নগরে রাস্তা পারাপার ও হাঁটতে গিয়ে প্রাণ গেছে বেশি মানুষের
চট্টগ্রাম নগরে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে চলছে। ৭ বছরের ব্যবধানে সড়কে মৃত্যু বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫৬৯ জন। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৮৪টি। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে পথচারীদের।
‘চট্টগ্রাম নগর সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন ২০২১-২০২৩’ সড়ক দুর্ঘটনার এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উদ্যোগে এ প্রতিবেদন আজ রোববার বিকেলে প্রকাশ করা হয়েছে। নগরের টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছে দ্য ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস)।
অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সাত বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছেন ১ হাজার ২৮ জন। তাঁদের মধ্যে মারা গেছেন ৫৬৯ জন। গুরুতর আহত হয়েছিলেন ৪০৯ জন। আহত হয়েছিলেন ৫০ জন। ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ৭২ জন। আহত হয়েছিলেন ৩৯ জন। গত বছরে (২০২৩) মারা যান ৯৬ শতাংশ। আহত হন ৮৩ জন। এর আগের বছর (২০২২) মারা গিয়েছিলেন ৯৪ জন। গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ২০২১ সালে, ওই বছর মারা গিয়েছিলেন ১০৩ জন।
গত তিন বছরে সড়কে সবচেয়ে বেশি প্রাণ গেছে পথচারীদের। তিন বছরে মৃত্যু হয়েছে ২৯৩ জনের। তাঁদের মধ্যে ১৭০ জন মারা গেছেন রাস্তা পারাপার ও হাঁটতে গিয়ে, যা মোট মৃত্যুর ৫৮ শতাংশ। মোটরসাইকেল আরোহী মারা গেছেন ৪৫ জন। তিন বছরের ব্যবধানে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়েছে ৯০ শতাংশ। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পো দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। অন্যদের মৃত্যু হয়েছে রিকশা, মোটরচালিত রিকশা, ট্রাক, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, কার, পিকআপ দুর্ঘটনায়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’–এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং যানজট নিরসনে সিটি করপোরেশনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। নগরের সড়কগুলোতে এখন যেভাবে রিকশা, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশার পরিমাণ বাড়ছে, তাতে দুর্ঘটনা ও যানজট বাড়বে। এখনই যদি এই ব্যাপারে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। পথচারীদের চলাচলের জন্য ফুটপাত মুক্ত করার বিকল্প নেই। তিনি রিকশাচালকদের জন্য লাইসেন্স ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানান।
সড়কের অব্যবস্থাপনা দূর করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরের কুলগাঁওতে একটি টার্মিনাল খুব দ্রুত চালু হবে। আরও নতুন করে শহরের প্রবেশমুখে টার্মিনাল করার পরিকল্পনা রয়েছে। শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য চালকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত গাড়িচালক মো. সাইফুল মিয়ার বোন মোচ্ছাম্মাৎ আফরোজা। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে নগর পুলিশ, বিআরটিএ, চালক, শ্রমিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।