নালিতাবাড়ীতে বর্ষা মৌসুমে হাঁস পালন, লাখো টাকা আয়
‘বর্ষা মৌসুমে কোনো কাজ থাকে না। ধানখেতে পানি থাকে। এ সময় আমরা মাঠে তিন মাস হাঁস পালন করি। এতে ব্যয় বাদেই দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করা যায়,’ উন্মুক্ত জলাশয়ে হাঁস পালনের বিষয়ে কথাগুলো বলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বেলতৈল গ্রামের কৃষক মোজাফফর হোসেন (৫৫)।
মোজাফফরের মতো উপজেলাটির শতাধিক কৃষক উন্মুক্ত জলাশয়ে তিন মাস হাঁস পালন করে লাভের মুখ দেখছেন। এ পদ্ধতির হাঁস পালনে তুলনামূলকভাবে খরচ কম হয়। আর সংশ্লিষ্ট খামারিদের বাড়িতে এসে দরদাম করে এসব হাঁস কিনে নিয়ে যান ক্রেতারা। এর ফলে খামারিদের বাড়তি কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় না।
উপজেলার একাধিক কৃষক বলেন, এপ্রিল মাসে কৃষকেরা ফসলের জমি থেকে বোরো ধান কেটে ঘরে তোলেন। এ সময় সেই জমি পতিত থাকে। এসব জমিতে বৃষ্টির পানি জমে চারপাশে জলাশয়ের মতো হয়। এ ছাড়া খাল-বিল তো আছেই। এর ফলে বর্ষার এ সময়ে হাঁস পালনে কোনো অসুবিধা হয় না।
দেশের বিভিন্ন এলাকার হ্যাচারি থেকে হাঁসের বাচ্চা কিনে আনেন এসব খামারিরা। এসব বাচ্চা ২০ দিন ধরে বাড়িতে রেখে লালনপালন করা হয়। ২০ দিন পর মৌসুমি খামারিরা বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়ে বাচ্চাগুলো ছেড়ে দেন। এগুলো দেখভালের জন্য দুই থেকে চারজন কর্মীর প্রয়োজন হয়। তাঁরা সকালে বাড়ি থেকে এসব হাঁস নিয়ে উন্মুক্ত জলাশয়ে ছেড়ে দেন। দিন শেষে সন্ধ্যা নামার আগেই আবার তাড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এতে করে হাঁসের জন্য বাড়তি কোনো খাবারের প্রয়োজন হয় না। জলাশয় থেকেই প্রয়োজনীয় খাবার পেয়ে থাকে হাঁসগুলো।
খামারিদের ভাষ্য, এভাবে আড়াই থেকে তিন মাসে প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা পরিণত হয়ে ওঠে। জুন থেকে জুলাই মাসে প্রতিটি হাঁস বিক্রি করা হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। এতে তিন মাসে বাড়িতে থাকা অবস্থায় হাঁসের খাবার, ওষুধ ও শ্রমিকের খরচ বাদে তাঁদের বেশ ভালো অঙ্কের লাভ হয়।
কালাকুমা গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, পাঁচ বছর ধরে তিনি মুক্ত জলাশয়ে হাঁস পালন করে আসছেন। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিবছর তিনি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বাড়তি উপার্জন করেন।
ঘাইলারা গ্রামের আমির হোসেন বলেন, ‘বাড়তি আয় হিসেবে আমি দুই বছর ধরে হাঁস পালন করতে আগ্রহী হয়েছি। বাড়ির পাশেই খেতখামারে সারা দিন হাঁস খাবার খায়। এতে খরচ কম হয়। হাঁস বড় হয়ে গেলে পাইকাররা বাড়িতে এসেই দরদাম করে হাঁস কিনে নিয়ে যান।’
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন মো. আবু সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে হাঁসের ডিম ও মাংসের চাহিদা বেশি থাকায় খামারিরা অল্প পুঁজিতেই লাভবান হচ্ছেন। এ কারণে এই উপজেলায় দিন দিন মৌসুমি হাঁস খামারির সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের মাধ্যমে খামার ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে খামারিদের পরামর্শ প্রদান ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।’