বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের বিরুদ্ধে ১৭ দফা অভিযোগ তুলেছে বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। দলীয় কার্যালয় নির্মাণের টাকা আটকে রাখা, দলে বিভেদ সৃষ্টি, ঠিকাদারি কাজ ভাগবাঁটোয়ারা ও কমিশন আদায়ের মতো অভিযোগগুলোর জবাব চেয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্যকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছে।
৩ অক্টোবর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. গোলাম ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাওলাদ হোসেন স্বাক্ষরিত চার পৃষ্ঠার ওই কারণ দর্শানোর নোটিশ সংসদ সদস্য শাহে আলমকে দেওয়া হয়। মো. মাওলাদ হোসেন গতকাল সোমবার রাতে নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবে বিষয়টি দলের অভ্যন্তরীণ হওয়ায় এর বেশি কিছু জানাতে চাননি। ১৫ দিনের মধ্যে তাঁকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সংসদ সদস্য শাহে আলম উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনি অভিযোগগুলোর প্রতিটি মিথ্যা দাবি করে প্রথম আলোকে বলেন, কোনো ধরনের সভা না করে নিজেরা মনগড়া ও অসত্য এসব অভিযোগ এনে তাঁকে নোটিশ দিয়েছে। এর কোনো ভিত্তি নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে তাঁকে বিতর্কিত করার জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি শাহে আলমের অভিযোগ, তাঁর কাছ থেকে গুটিকয় নেতা কাজকর্মের সুবিধা নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে এ ধরনের অসত্য ভিত্তিহীন তথ্য তুলে একতরফাভাবে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাওলাদ হোসেন এসব অস্বীকার করে বলেছেন, গত ১৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হয়েছে। সেখানে সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন আর কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি। এ জন্য সভায় তাঁর উপস্থিতিতেই এই চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শাহে আলমকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের অনুলিপি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও এসেছে। সেখানে উল্লেখ করা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, দলীয় কার্যালয় নির্মাণের জন্য গচ্ছিত টাকা আটকে রাখা, দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে নিজস্ব বলয় সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, বানারীপাড়া পৌরসভাসহ দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, দলীয় কর্মসূচি এড়িয়ে আলাদা কর্মসূচি করা, অনুসারী ও আত্মীয়স্বজন কর্তৃক উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা, নিজ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে ঠিকাদারি কাজ ভাগ করে দেওয়া, সরকারি খাল দখল, ঠিকাদারি কাজে ২ থেকে ৫ শতাংশ কমিশন আদায়, শহীদ বুদ্ধিজীবী জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার জমি বিদ্যালয়ের জন্য দখল করা, চাঁদা উত্তোলন ইত্যাদি।
এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক বরাবর লিখিত জবাব দেওয়ার জন্য শাহে আলমকে বলা হয়েছে। চিঠির অনুলিপি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের কাছেও পাঠানো হয়েছে বলে ওই নোটিশেই উল্লেখ করা হয়েছে।