কলেজে যুবদল নেতার ‘আধিপত্যের’ প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুবদল নেতার ‘সন্ত্রাসের’ প্রতিবাদে বরকোটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বরকোটা স্কুল অ্যান্ড কলেজ ‘সন্ত্রাস, অনিয়ম, দুর্নীতি ও দালালমুক্ত করার’ দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দাউদকান্দি উপজেলার আমিরাবাদে এই অবরোধের কারণে মহাসড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা ইসলামসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেন। পাশাপাশি কলেজের পাঠাগার ভেঙে দোকান নির্মাণ, অফিস সহকারীকে মারধরসহ বিভিন্ন অভিযোগে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রহুল আমিনের বিরুদ্ধে মামলার পরামর্শ দেন কর্মকর্তারা। এ সময় সেখানে কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (দাউদকান্দি-চান্দিনা সার্কেল) ফয়সাল তানভীর, সেনাবাহিনীর ইনচার্জ মেজর মো. মাহমুদ, দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি জুনায়েত চৌধুরী, দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি মো. আবু ওবায়েদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, অবরোধের খবর পেয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা মহাসড়কে পৌঁছালে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরা হয়। শিক্ষার্থীরা জানান, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বরকোটা গ্রামের বাসিন্দা মো. রহুল আমিন আধিপত্য খাটিয়ে গত ৫ আগস্ট তাঁর দলবল নিয়ে কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর করেন এবং লুটপাট চালান। কলেজের অফিস সহকারী মো. আদিলকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেন, তাঁর একটি পা ভেঙে ফেলেন। তা ছাড়া কলেজের পাঠাগার ভেঙে প্রধান ফটকের পাশে জায়গা দখল করে চারটি দোকান নির্মাণ করেন। তিনি কলেজে বহিরাগত লোকদের নিয়ে প্রবেশ করে কারণে-অকারণে শিক্ষার্থীদের মারধর করেন। হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগের কথা শোনেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, রুহুল আমিনের হুমকির কারণে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন ৫ আগস্টের পর কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। কলেজের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কলেজের কার্যক্রম এখন রুহুল আমিনের কথায় চলছে। কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাঁর স্বজনদের হাতে মার খাচ্ছে। রহুল আমিন বর্তমানে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তিনি সভাপতি হলে এ কলেজ ধ্বংস হয়ে যাবে।

শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শোনার পর ইউএনও নাঈমা ইসলাম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আমিনুল ইসলামকে পাঠাগার ভেঙে দোকান নির্মাণ, ভাঙচুর, লুটপাট, অফিস সহকারীকে পেটানোর অভিযোগে রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেন। সেনাবাহিনীর ইনচার্জ মেজর মো. মাহমুদ, দাউদকান্দি থানার ওসি মো. জুনায়েত চৌধুরী একই কথা বলেন। পরে সঠিক বিচারের আশ্বাসের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে যুবদল নেতা রুহুল আমিন তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন। তিনি আরও দাবি করেন, ২০০১ সালে কলেজের তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ওবায়দুল হক ভূঁইয়ার কাছ থেকে প্রধান ফটকের পাশের জায়গা ভাড়া নিয়ে নিজ খরচে চারটি দোকান নির্মাণ করছেন। করোনাকালে তাঁর নির্মাণ খরচের টাকা ফেরত না দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ থানায় চাঁদাবাজি মামলা করেন এবং দোকানের জায়গায় কলেজের পাঠাগার নির্মাণ করেন। গত ৫ আগস্টের পর তিনি তাঁর নির্মিত দোকানগুলো পুনরায় দখলে নেন।

ইউএনও নাঈমা ইসলাম বলেন, কলেজের পাঠাগার ভেঙে চারটি দোকান নির্মাণ করার অভিযোগে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আমিনুল ইসলামকে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।