যশোর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার বিরুদ্ধে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে রাতভর মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে শহীদ মসিয়ূর রহমান ছাত্রাবাসে সোহেল রানার কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম শাহরীন রহমান প্রলয় (২৪)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং একই ছাত্রাবাসের আবাসিক ছাত্র। তাঁকে রাত দুইটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত দফায় দফায় নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থী। রাতভর নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গুরুতর আহত অবস্থায় শাহরীনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য আনোয়ার হোসেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা সোহেল রানা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছে। তাকে এতই ভীতসন্ত্রস্ত মনে হচ্ছিল যে কথা বলতে পারছিল না। তাকে বলেছি লিখিত অভিযোগ দিতে। অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন শেষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার ক্যাম্পাসে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে শাহরীনকে মারধর করেন শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহীনুর রহমান। শাহীনুর ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনায় শাহীনুরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন শাহরীন। এর জের ধরে গতকাল রাত দুইটার দিকে ছাত্রাবাসে ঘুমিয়ে থাকা শাহরীনকে ডেকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়।
চিকিৎসাধীন শাহরীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমবার আমার মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার ঘটনায় আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। এ ঘটনায় ঘুম থেকে তুলে রাত দুইটায় ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার নির্দেশে আমাকে তাঁর কক্ষে ডেকে নিয়ে যান ছাত্রলীগ কর্মী আমিনুল ইসলাম ও সিয়াম। সভাপতির কক্ষে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই ছাত্রলীগ নেতা আশিকুজ্জামান লিমন, ইসাদ, রায়হান রহমান রাব্বি, বেলাল হোসেন, শেখ বিপুল, রাইসুল হক রানাসহ প্রায় ১০-১৫ জন আমার ওপর অতর্কিত মারধর শুরু করেন। আমি কক্ষের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি। তখন তাঁরা আমাকে পা দিয়ে লাথি মারতে থাকেন। এ সময় তাঁরা আমাকে বলতে থাকেন, “কেন প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিস?”এ সময় তাঁরা আমার মুঠোফোন কেড়ে নেন। একপর্যায়ে তাঁরা রড দিয়ে আমার সারা শরীরে পেটাতে শুরু করেন। ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চলে দফায় দফায় এমন নির্যাতন।’
শাহরীন আরও বলেন, ‘প্রাণে বাঁচতে আমি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি জানাই। তিনি বলেন, “কালকের মধ্যে অভিযোগ তুলে নিবি। নইলে তোকে গুলি করে মারব।” তিনি আমাকে বুকে লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেন এবং “ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়িতে চলে যাবি” বলে নির্দেশ দেন।’
শাহরীন বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আজ দুপুরে আমার মায়ের মুঠোফোনেও ফোন করে হুমকি দেওয়া হয় অজ্ঞাত নম্বর থেকে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আমার পরিবারের ওপর বোমা মারারও হুমকি দিচ্ছেন। আমি এ ঘটনায় বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপিং দ্বন্দ্ব থাকে। এসব গ্রুপিংয়ে বারবার আমার নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘ক্যাম্পাসে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে যা হয়েছে, সেটা মাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ঘটনার দিন আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম না। যশোরের বাইরে ছিলাম। গতকাল রাত তিনটার দিকে আমি ছাত্রাবাসে প্রবেশ করেছি। আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ করা হচ্ছে, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে উপাচার্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছে। তাকে এতই ভীতসন্ত্রস্ত মনে হচ্ছিল যে কথা বলতে পারছিল না। তাকে বলেছি লিখিত অভিযোগ দিতে। অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন শেষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’