চারটি আসনেই জাপার ভরাডুবি 

জাপার প্রার্থী একটি আসনে দ্বিতীয়  অবস্থানে। বাকি তিনটিতে প্রার্থীরা তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী চারটি আসনে লাঙ্গলের ভরাডুবি হয়েছে। চারটি আসনের মধ্যে একটিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও বাকি তিনটিতে দলীয় প্রার্থীরা তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন। 

নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনে আওয়ামী লীগের (নৌকা) প্রার্থী আফতাব উদ্দিন সরকার জয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯০২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির তছলিম উদ্দিন পেয়েছেন পেয়েছেন ২৪ হাজার ৬৬২ ভোট। এখানে আওয়ামী লীগের একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ সাতজন প্রার্থী ছিলেন। 

নীলফামারী-২ সদর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান নূর (নৌকা) ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৩৯ ভোট পেয়ে পঞ্চম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল আবেদীন (ট্রাক) পেয়েছেন ১৫ হাজার ৬৮৪ ভোট। এ আসনে জাতীয় পার্টির  শাহজাহান আলী চৌধুরী (লাঙ্গল) ভোট পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৪৩। এ আসনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

নীলফামারী-৩ জলঢাকা আসনে ৩৯ হাজার ৩২১ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন পাভেল (কাঁচি) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মার্জিয়া সুলতানা (ঈগল) ভোট পেয়েছেন ২৫ হাজার ২০৫। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল (লাঙ্গল) ১০ হাজার ২২৮ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী গোলাম মোস্তফা (নৌকা) দলীয় সিদ্ধানে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র চারজন প্রার্থীসহ ৯ জন প্রার্থী ছিলেন। 

■ জাপার সংসদ সদস্যরা এলাকায় আসেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। 

■ তাঁরা দলের নেতা–কর্মীদের মূল্যয়ন না করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনে ৬৯ হাজার ৯১৪ ভোট পেয়ে জাতীয় পার্টির স্বতন্ত্র প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম (কাঁচি) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোখছেদুল মোমিন (ট্রাক) ভোট পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৩০১। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জাকির হোসেন (নৌকা) দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান (লাঙ্গল) ৪১ হাজার ৩১৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন।

নীলফামারী-৩ ও ৪ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রত্যাহার করা হয়। তবে ওই দুই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা  তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন। 

নির্বাচনের ফলাফলের বিষয়ে জানতে নীলফামারী-৩ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনের প্রার্থী সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমানের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ফোন ধরেননি।

জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতা–কর্মীরা মনে করেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁরা দলীয় নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন না করা, এলাকায় না আসা ও ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা না করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকায় নিজস্ব রাজনৈতিক ধারা গড়ে তুলতে না পারায় জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। 

জেলা জাতীয় পার্টির প্রচার সম্পাদক আবদুল হান্নান বলেন, ‘জাতীয় পার্টি দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করার কারণে অনেকে মনে করেন জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের গৃহপালিত দল। যাঁরা সংসদ সদস্য ছিলেন, তাঁরা নেতা-কর্মীদের কম মূল্যায়ন করেছেন, এলাকায় কম এসেছেন এবং ডোমার-ডিমলায় দলীয় কোন্দল আমাদের ফল বিপর্যয়ের মূল কারণ।’ 

তবে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ পারভেজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীরা সম্মানজনক ভোট পেয়েছেন। একই আসনে আমাদের একাধিক প্রার্থী ছিলেন। জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি সিদ্দিকুল আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আমাদের সফলতা, ব্যর্থতা দুটোই আছে।’