ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং ‘বিতর্কিত’ আইনটি বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অব্যাহত রয়েছে। আজ রোববার এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা শুভ হতে পারে না
সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নোয়াখালীতে কর্মরত সাংবাদিকেরা। এই কণ্ঠরোধের চেষ্টা কখনো শুভ হতে পারে না বলে মনে করেন তাঁরা। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নোয়াখালীতে কর্মরত সাংবাদিকদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে এ অভিযোগ করা হয়।
নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আয়োজিত কর্মসূচিতে জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল কাইয়ুম, নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আলমগীর ইউসুফ, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির (বাসস) মহাসচিব মনিরুজ্জামান চৌধুরী, স্থানীয় দৈনিক দিশারীর সম্পাদক আকাশ মো. জসিম, সাংবাদিক মেজবাহুল হক, আবু নাছের, আকবর হোসেন, মাসুদ পারভেজ, ইকবাল হোসেন, মাহবুবুর রহমান প্রমুখ। মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহবুবুর রহমান।
প্রতিবেদনের জেরে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গভীর রাতে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের বিষয়টিকে উদ্দেশ্যমূলক উল্লেখ করে মানববন্ধনে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আলমগীর ইউসুফ বলেন, পত্রিকার কোনো সংবাদে যদি ভুল হয়, সেই ভুল যদি সংশোধন হয়, সে ক্ষেত্রে কারও কোনো অভিযোগ থাকার কথা নয়। এরপরও যদি অভিযোগ থেকে থাকে, তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। সেখানে না গিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না।
মনিরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে দেশে সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করার যে চর্চা শুরু হয়েছে, তা কারও জন্য শুভ হতে পারে না। তাই আইনটি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। সেই সঙ্গে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
সাংবাদিকতার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি
ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আজ সকাল ১০টায় মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকেরা। ঝালকাঠি সাংবাদিক সমাজ, প্রেসক্লাব ও প্রথম আলো বন্ধুসভা এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সহসভাপতি আক্কাস সিকদারের সঞ্চালনায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল সাহা, প্রেসক্লাবের সহসম্পাদক কে এম সবুজ, স্থানীয় দৈনিক গাউছিয়া পত্রিকার সম্পাদক অলোক সাহা, সাংবাদিক রতন আচার্য্য, রহিম রেজা, আল আমিন তালুকদার ও আসম মাহমুদুর রহমান।
মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল সাহা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বারবার মামলা করে গণমাধ্যমকর্মীদের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, একই পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক (সাভার) শামসুজ্জামান ও যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি মাহাবুব আলমসহ অনেক সাংবাদিকের নামে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। শামসুজ্জামানকে গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বাক্স্বাধীনতা নিশ্চিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও সাংবাদিক শামসুজ্জামানের মুক্তির দাবি জানান।
প্রেসক্লাবের সহসভাপতি আক্কাস সিকদার বলেন, কোনো অভিযোগের তদন্ত ছাড়াই একজন সাংবাদিককে গভীর রাতে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া দুঃখজনক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের পেশাগত কাজ বন্ধ করা যাবে না। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকেরা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করেন। এ আইন বাতিল করে সাংবাদিকতার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।
‘সত্য তুলে ধরতে গিয়ে শামসুজ্জামান জেলে’
নীলফামারীর সৈয়দপুরে সচেতন সুধী সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে। সৈয়দপুর প্রেসক্লাবের সামনে আজ বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন কবি ও গীতিকার কাজী জাহিদ, সাংবাদিক জিকরুল হক, মো. আমিরুজ্জামান, সাদিকুল ইসলাম, আমিরুল আরমান, এম আর আলম, প্রথম আলো সৈয়দপুর বন্ধুসভার সভাপতি তাপস রায়, সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান, সদস্য তৃপ্তি রায় প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সংবাদপত্রের কাজ হলো প্রকৃত তথ্য জাতিকে জানানো। সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়। অথচ সেই সত্য তুলে ধরতে গিয়ে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে জেলে যেতে হয়েছে। সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ শুভ বার্তা হতে পারে না। এমন দমন নীতি বন্ধ করতে হবে।
ভয় দেখানোর জন্য মামলা, তুলে নেওয়া
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেছে উপজেলা প্রেসক্লাব। আজ বেলা ১১টায় আয়োজিত মানববন্ধন থেকে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা প্রত্যাহার এবং নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মধ্যরাতে সাংবাদিককে তুলে নেওয়া, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা ও শামসুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানো মূলত সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর জন্য করা হয়েছে। সাংবাদিকের কণ্ঠ রোধ করার জন্য করা হয়েছে। এ অবস্থায় গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত নিরাপত্তাও হুমকির মুখে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে, সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও শামসুজ্জামানকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন উপজেলা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক বিপ্লব হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম, রিপোর্টার্স ইউনিট তারাগঞ্জ শাখার সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, বদরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, সাংবাদিক মীর আনোয়ার আলী, রহিদুল মিয়া, শিপুল ইসলাম, রহমত মণ্ডল, মোতালেব হোসেন, নাহিদুজ্জামান, জুয়েল ইসলাম, তারাজুল ইসলাম, আমজাদ হোসাইন, সামছুজ্জামান, ওমর ফারুক, আসাদুজ্জামান, সুজন প্রামাণিক প্রমুখ।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, নোয়াখালী এবং প্রতিনিধি, ঝালকাঠি, সৈয়দপুর, নীলফামারী ও তারাগঞ্জ, রংপুর]