হাতুড়িপেটার শিকার অধ্যক্ষকে বাড়ি থেকে বরণ করে কলেজে নিয়ে এলেন শিক্ষার্থীরা
তিন দিন আগে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার নবকাম পল্লী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওবায়দুর রহমানকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেন কিছু ব্যক্তি। আজ রোববার সেই অধ্যক্ষকে তাঁর কোয়ার্টার থেকে ফুলের মালা পরিয়ে সসম্মানে কলেজে ফিরিয়ে আনলেন শিক্ষার্থীরা।
অধ্যক্ষের কোয়ার্টার থেকে কলেজটি থেকে আনুমানিক দেড় কিলোমিটার দূরে বল্লভদী ইউনিয়নের বল্লভদী গ্রামে অবস্থিত। সকালে শিক্ষকের কোয়ার্টারে সমবেত হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। শতাধিক শিক্ষার্থী বেলা ১১টার দিকে অধ্যক্ষের গলায় ফুলের মালা দিয়ে তাঁকে নিয়ে মিছিল করতে করতে কলেজে নিয়ে আসেন। এ সময় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে অধ্যক্ষকে কলেজের নিজ কার্যালয়ের চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হয়।
কলেজের শিক্ষার্থী মো. হাসিব শেখ বলেন, ‘আমাদের অধ্যক্ষ স্যার একজন ভালো মানুষ। মিথ্যা অভিযোগ তুলে স্যারকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জোর করে তাঁর কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে সই নেয় এলাকার একটি সন্ত্রাসী বাহিনী ও কতিপয় দুষ্কৃতকারী। এর পর থেকে স্যার অসুস্থ হয়ে বাসায় ছিলেন। রোববার সকালে আমরা শিক্ষার্থীরা মিলে স্যারকে তাঁর বাসা থেকে সম্মানের সঙ্গে নিয়ে এসেছি।’
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে অধ্যক্ষ ও তাঁর ছেলে কলেজে প্রবেশ করার সময় স্থানীয় প্রভাবশালী কাইয়ুম মোল্লা ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কামরুল গাজীর সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের একটি বাগানের ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে সন্ত্রাসীরা তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে কিছু অছাত্র আর ছাত্রকে দিয়ে জোর করে তাঁর কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয়। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ ওই দুই ব্যক্তিসহ নয়জনের বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন সালথা থানায়। এরপর মুঠোফোন বন্ধ রেখে আত্মগোপনে চলে যান কাইয়ুম মোল্লা ও কামরুল গাজী। মামলায় অধ্যক্ষ কোনো শিক্ষার্থীকে আসামি করেননি।
শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছায় অভিভূত হয়ে যান অধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আজ আমার শিক্ষকজীবন সার্থক হলো। আমি আনন্দিত, আমি আপ্লুত। এ আনন্দ আমি কথায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমাকে সম্মান দিয়ে আমার প্রিয় শিক্ষার্থীরা কোয়ার্টার থেকে কলেজে নিয়ে এসেছে। আমি আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’
ওবায়দুর রহমান আরও বলেন, তাঁর ওপর হামলা ও জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে সই করানোর খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। তাই সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। তাঁর পাশে দাঁড়ানোর জন্য ইউএনও, সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রতিও কৃতজ্ঞ তিনি।