চট্টগ্রামে টিসিবির কার্যক্রম
বাজার খরচ মেটাতে হিমশিম, বাধ্য হয়ে টিসিবির লাইনে চাকরিজীবী এনামুল
চাহিদার তুলনায় পণ্য কম। প্রতিদিন প্রতি ট্রাক থেকে ২০ থেকে ২৫ জন খালি হাতে ফিরছেন।
বেলা ১১টা হলেও তখনো আসেনি টিসিবির ট্রাক। কম দামে চাল, ডাল ও তেল বিক্রি হচ্ছে—এমন খবরে আগে থেকে মানুষের ভিড়। ট্রাক আসতেও ট্রাকের পেছনে জটলা বেঁধে হইচই শুরু করেন ক্রেতারা। একপর্যায়ে ট্রাকে থাকা পরিবেশক সবাইকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে বলেন। এরপর একে একে টাকা দিয়ে চাল, ডাল ও তেল বুঝে নেন ক্রেতারা। বেলা বাড়তেই সারি দীর্ঘ হতে থাকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের চৌমুহনী এলাকায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাক সেল কার্যক্রমের চিত্র এটি। তবে পরিবেশকেরা জানিয়েছেন, গত ২১ দিনের চিত্র একই। কম দামে চাল, ডাল ও তেল কেনার আশায় প্রতিদিনই ট্রাক আসার আগে থেকে মানুষের ভিড় থাকে। ট্রাক এলেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন ক্রেতারা। কেউ ছিটকে পড়েন সারি থেকে।
সারি দীর্ঘ হওয়ার কারণ হিসেবে পরিবেশকেরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় পণ্য কম। প্রতিদিন প্রতি ট্রাকে ২০–২৫ জন খালি হাতে ফিরছেন। বর্তমানে প্রতিটি ট্রাকে ১০০ টাকা লিটার দরে ২ লিটার ভোজ্যতেল, ৬০ টাকা দরে ২ কেজি মসুর ডাল, ৩০ টাকা দরে ৫ কেজি চাল বিক্রি করা হয়। এই তিনটি পণ্য কিনতে একজন গ্রাহককে দিতে হয় ৪৭০ টাকা।
গতকাল চৌমুহনী বাজার এলাকায় টিসিবির সারিতে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী মো. এনামুলের সঙ্গে। প্রায় এক ঘণ্টা পর দুপুর ১২টার দিকে পণ্য বুঝে পান তিনি। এনামুল বলেন, মাসের শেষের দিকে এসে বাজার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তাই উপায় না পেয়ে টিসিবির সারিতে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। বাসা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে এসেছেন চাল-ডাল কিনতে।
চট্টগ্রামে গত ৩১ অক্টোবর থেকে সপ্তাহে ছয় দিন ট্রাকে করে চাল, ডাল ও তেল বিক্রি করছে টিসিবি। আর প্রতিদিনের চিত্র প্রায়ই একই। বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে লোকসংখ্যা হিসেবে পণ্য বরাদ্দ কম থাকায় ভিড় বেশি। চৌমুহনী বাজার এলাকাটি নগরের উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের আওতাধীন। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, এটি চট্টগ্রাম নগরের পঞ্চম ঘনবসতি এলাকা, জনসংখ্যা ১ লাখ ৫২ হাজার ৩২৬।
টিসিবি এই ওয়ার্ডে সপ্তাহে চার দিন পণ্য বিক্রি করে। এর মধ্যে দুই দিন আগ্রাবাদ মোড়ে ও দুই দিন চৌমুহনী বাজার এলাকায়। সেই হিসাবে এই ওয়ার্ডে ১২ দিন পণ্য বিক্রি করেছে টিসিবি। কাগজে-কলমে এ হিসাব ধরলে ইতিমধ্যে এই ওয়ার্ডের ৪ হাজার ২০০ ভোক্তা পণ্য পেয়েছেন। যেটি মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশের কম। এর বাইরে টিসিবির দোকানে পরিবার কার্ডের মাধ্যমে আরও ৮ হাজার ৭০০ পরিবারকে এই তিন পণ্য দেওয়া হচ্ছে।
আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে টিসিবির এ কার্যক্রম চলবে। তবে চাহিদার কারণে কার্যক্রম বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছে টিসিবি। এর মধ্যে গতকাল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, টিসিবির প্রতি ট্রাকে ৩৫০ জনের স্থলে ৪০০ জনের বরাদ্দ দেওয়া হবে।
টিসিবি চট্টগ্রামের যুগ্ম পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখনো সরাসরি প্রজ্ঞাপন হয়নি। তবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে বলেছেন। আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে সেটি কার্যকর হতে পারে।