পটুয়াখালীতে সাড়ে ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত, লোকালয় প্লাবিত
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে পটুয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রাথমিকভাবে সাড়ে ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ি মেরামত করতে অন্তত ১৫ কোটি টাকার প্রয়োজন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলার সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের বলই কাঠি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধের চারটি অংশ ভেঙে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ভেসে গেছে বাঁধের ওপর ইউনিয়ন সংযোগ সড়কটি। বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি প্লাবিত হয়ে বাড়িঘর, মাঠঘাট, ফসলি খেত তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলইকাঠি, উত্তর বাদুরা ও পূর্ব আউলিয়াপুর—এই তিন গ্রামের বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা দুলু মৃধা জানান, জোয়ারের জলেচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে তাঁদের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধের দক্ষিণ পাড়ে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা রয়েছে। এপারের তিন গ্রামের শিক্ষার্থীরা বাঁধের ওপর নির্মিত সড়ক দিয়েই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করত। এই সড়ক দিয়ে রিকশা, অটোবাইকসহ নানা ধরনের যানবাহন চলাচল করত। কিন্তু বাঁধের সঙ্গে সড়কটি ভেসে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৫৫/৩ পোল্ডারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও গতকাল দুপুরের জোয়ারে তা সম্পূর্ণ ভেঙে জোয়ারের পানি পূর্ব চরবিশ্বাসের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চর বাংলার দক্ষিণ চর আগস্তির বাসিন্দা জুলেখা বেগম ও তাঁর স্বামী আবু তাহের মুন্সী জানান, তাঁরা বাঁধের ভেতরে ঝুপড়ি ঘরে থাকতেন। কিন্তু বাঁধ ভেঙে জলোচ্ছ্বাসে তাঁদের ঝুপড়ি ঘরটিও ভেসে গেছে।
জেলার রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া উপজেলায় মোট ৫১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ৯ দশমিক ৫০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে কমপক্ষে ১১ কোটি টাকা প্রয়োজন।পাউবোর পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন
পাউবো পটুয়াখালী সূত্র জানায়, জেলায় বেড়িবাঁধ রয়েছে ১ হাজার ৮১৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৮ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে বিভিন্ন অংশে অন্তত ১২ দশমিক ৫০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ উপচে জোয়ারের পানিতে লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর আওতায় জেলার রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া উপজেলায় মোট ৫১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ৯ দশমিক ৫০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে কমপক্ষে ১১ কোটি টাকা প্রয়োজন। তবে পানি নেমে যাওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
পাউবো পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কার্যালয়ের আওতায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৮ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে বিভিন্ন অংশে প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে প্রয়োজন কমপক্ষে চার কোটি টাকা। অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পর মেরামতের কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।