সিঙ্গাইরে বৃদ্ধাকে হত্যার পর যেভাবে লাশ রাখা হয় সিন্দুকে
ছেলের বউয়ের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর পৌর এলাকায় হায়াতুন নেছা নামের এক বৃদ্ধাকে শ্বাস রোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। এরপর তাঁর লাশ ঘরের ভেতর একটি সিন্দুকে রেখে দেওয়া হয়।
গতকাল শুক্রবার গ্রেপ্তার ওই যুবক এ নিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ শনিবার বিকেলে জেলা পুলিশের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তার যুবকের নাম সবুজ হোসেন (২৬)। তাঁর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার খামারপাড়া গ্রামে। তিনি ঢাকার মিরপুরে থাকতেন।
সিঙ্গাইর থানা-পুলিশ, এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিঙ্গাইর পৌর এলাকার নয়াডাঙ্গী গ্রামের হায়াতুন নেছার ছেলে আবদুল খালেক সৌদিতে থাকেন। গ্রামের বাড়িতে হায়াতুন নেছা ও তাঁর ছেলের বউ (২৮) থাকতেন। ছেলের বউ পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় শাশুড়ির সঙ্গে প্রায়ই তাঁর ঝগড়া হতো। এ নিয়ে ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় ছেলের বউ ও শাশুড়ির ঝগড়া হয়। পরের দিন সকালে ছেলের বউ বাড়ি থেকে চলে যান। পরে সন্ধ্যায় মাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আসেন ওই ছেলের বউ।
হায়াতুন নেছার কোনো খোঁজ না পাওয়ায় ওই ছেলের বউকে দেখে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁর সম্পর্কে জানতে চান। একপর্যায়ে ওই গৃহবধূ বলেন, ঘরের ভেতরের স্টিলের সিন্দুকে তাঁর শাশুড়ির লাশ আছে। পরে সিন্দুকের তালা ভেঙে লাশ দেখতে পান প্রতিবেশীরা। এ সময় ওই গৃহবধূ ও তাঁর মাকে আটক করেন এলাকাবাসী। রাত আটটার দিকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। আটক দুজনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন এলাকাবাসী।
এ ঘটনায় পরের দিন নিহত হায়াতুন নেছার ভাতিজা মো. নিয়ামত বাদী হয়ে ওই গৃহবধূ, তাঁর মা ও সবুজের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁদের দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর গত বুধবার ঢাকার কাফরুল এলাকা থেকে সবুজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল আসামি সবুজকে আদালতে হাজির করলে বিচারকের কাছে তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
আসামি সবুজ স্বীকারোক্তিতে বলেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার হায়াতুন নেছা তাঁর (সবুজ) সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ানোয় ছেলের বউকে বাধা দিয়ে আসছিলেন। ঘটনার দিন বাড়িতে হায়াতুন নেছাকে সবুজ মেঝেতে বসা অবস্থায় পেয়ে পেছন থেকে নাক ও মুখ সজোরে চেপে ধরেন। পরে মৃত্যু নিশ্চিত হলে সবুজ লাশ গুম করার জন্য একই ঘরে থাকা স্টিলের সিন্দুকের মধ্যে লাশ লুকিয়ে তালা মেরে দেন। পরে তিনি ওই গৃহবধূর সঙ্গে রাত্রি যাপন করেন। পরের দিন সকালে ওই বাড়ি থেকে সবুজ চলে যান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান বলেন, গতকাল এ মামলার প্রধান আসামি সবুজ আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে আদালতের বিচারকের নির্দেশে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।