মধুপুরে কৃষিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুসারীদের সভা, ছিলেন না সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক
বিশেষ বর্ধিত সভার মধ্য দিয়ে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল টাঙ্গাইলের মধুপুর আওয়ামী লীগের বিভক্তি। উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশেষ বর্ধিত সভা’। কিন্তু তাতে উপস্থিত ছিলেন না দলটির উপজেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক নেতা।
মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম খান ওরফে আবু খাঁ টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দেন। গত মে মাসে এ ঘোষণা দেওয়ার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভক্তি প্রকাশ হতে থাকে। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। তাঁর অনুসারীরা সরোয়ার আলম খানের প্রার্থিতাকে ভালোভাবে নেননি। এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগে বিভক্তি বাড়তে থাকে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফি উদ্দিন মনি ও সরোয়ার আলম খান গত ২৩ জুন সমাবেশের আয়োজন করেন। ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে আব্দুর রাজ্জাকের অনুসারীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এর পর থেকে দুই পক্ষের ‘মুখ দেখাদেখি’ বন্ধ হয়ে যায়।
আব্দুর রাজ্জাকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইয়াকুব আলী, পৌর মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর ফরহাদুল ইসলাম ও সাদিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গতকালের বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়। মধুপুর অডিটরিয়ামে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও তাঁদের অনুসারীরা অংশ নেননি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম খান বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের নামে বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। কিন্তু আমরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কিছুই জানি না। যাঁরা এই সভা ডেকেছেন, তাঁরা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানো হবে।’
সভা সূত্র জানায়, বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইয়াকুব আলী।
গতকাল সন্ধ্যায় ইয়াকুব আলী প্রথম আলোকে বলেছেন, বিশেষ বর্ধিত সভা সফল হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এবং ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দু-একজন অনুসারী ছাড়া সব নেতা-কর্মী আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল।
তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম খান বলেছেন, অনেক নেতাদের ভয় ও লোভ দেখিয়ে বর্ধিত সভায় নেওয়া হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলোচনা করে খুব শিগগিরই উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডাকবেন।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বলেছেন, মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-১ আসনে ২০০১ সালে আব্দুর রাজ্জাক দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি সংসদ সদস্য হন। দুবার তিনি মন্ত্রীও হয়েছেন। মধুপুরে দলীয় ও সরকারি বিভিন্ন বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক দায়িত্ব দিয়ে রাখতেন সরোয়ার আলম খানকে। একসময় সরোয়ার দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে মে মাসে ঘোষণা দেন। গণমাধ্যমে কৃষিমন্ত্রীকে কটুক্তি করে বক্তব্য দেন। এর পর থেকেই দলীয় কোন্দল প্রকাশ পায়।