জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন আবাসিক হলে অবৈধভাবে অবস্থানরত শিক্ষার্থী এবং পোষ্য কোটায় ভর্তি শিক্ষার্থীদের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে এ বিষয়ক নির্দেশনা বিজ্ঞপ্তি আকারে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হলের কক্ষগুলোতেও বিজ্ঞপ্তির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অবৈধভাবে হলে অবস্থারত শিক্ষার্থী ও পোষ্য কোটায় ভর্তি শিক্ষার্থীদের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে যাঁরা অবৈধভাবে হলে অবস্থান করছেন, তাঁরা এবং সব পোষ্যকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হলো। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে হল ত্যাগ না করলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নিগার সুলতানা বলেন, ‘রোববার সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। আজকেও সব হলের প্রাধ্যক্ষ এবং উপাচার্য স্যার নিজে আমাদের সঙ্গে বসছিলেন। আবারও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন এবং ইতিমধ্যে বিভিন্ন হলে এ–সংক্রান্ত নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। হলে যেসব অবৈধ শিক্ষার্থী আছে, তাদেরকে হল ছাড়তে বাধ্য করা হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডাকে। সভায় ধর্ষণকাণ্ডে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা। এ ছাড়া তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। দুজনকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া সভায় আবাসিক হলে অবস্থানরত অবৈধ শিক্ষার্থীদের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ ওই সময়ের মধ্যে হল না ছাড়লে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং আবাসিক হলগুলো থেকে অছাত্রদের বের করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসব দাবি আদায়ে সোমবার ক্যাম্পাসে গণপোস্টারিং, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বর এলাকায় গণপোস্টারিং কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। ‘ধর্ষকের কালো হাত ভেঙে দাও’, ‘এই ক্যাম্পাসে ধর্ষকের কোনো জায়গা নেই’, ‘ছদ্ম গণরুম বিলুপ্ত করো’, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলছে জাবি’ ইত্যাদি স্লোগান–সংবলিত পোস্টার নতুন কলাভবন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, পুরোনো কলাভবনের দেয়ালে টাঙিয়ে দেওয়া হয়। বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে একটি মতবিনিময় সভা করেন। সভায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’ গঠন করা হয়।
বিকেল চারটার দিকে শিক্ষার্থীদের অপর একটি অংশ নতুন কলাভবনের সামনে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে তাঁরা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা।
বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান ধর্ষণে অভিযুক্ত ও তাঁদের পালাতে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।