বরিশালে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে তিনজনের মৃত্যু, নতুন করে হাসপাতালে ১২৫

মশারি টাঙিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে। বরিশাল শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেফাইল ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দুই নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে বিভাগে নতুন করে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন আরও ১২৫ জন ডেঙ্গু রোগী।

স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এ নিয়ে বিভাগে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৩৮ জনের মৃত্যু হলো। আর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এলেন ৫ হাজার ৪৮৫ জন। এর মধ্যে বর্তমানে বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩২৬ ডেঙ্গু রোগী। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কুমার মণ্ডল এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার করকি এলাকার আশরাফ উদ্দিন (৫০), বরগুনা সদরের বালিয়াতলী এলাকার পারভীন বেগম (৪৫) ও বরগুনার বামনা উপজেলার লাবিবা আক্তার (১৯) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১২৫ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ২৯ জন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া ৬ জন পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চলতি বছর বিভাগে মারা যাওয়া ৩৮ জনের মধ্যে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯, পিরোজপুরে ৩, বরগুনা, ভোলা ও পটুয়াখালীতে দুজন করে রোগী মারা গেছেন।

অক্টোবরে ভয়াবহ রূপ

বরিশাল বিভাগে এবার বছরের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম ছিল। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল কম; কিন্তু অক্টোবরে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, এবার মারা যাওয়া ৩৮ জনের মধ্যে জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে ১০ জন মারা গেছেন। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর দুই মাসে নয়জন মারা গেছে; কিন্তু শুধু অক্টোবরেই ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর চলতি নভেম্বরের দুই দিনে তিনজনের মৃত্যু হলো।

অন্যদিকে বছরের শুরু থেকে আক্রান্তের সংখ্যাও ছিল অনেক কম। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে বিভাগের ছয় জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ১ হাজার ৬৭৭ জন। বাকি ১ হাজার ৯৫ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন আগস্ট–সেপ্টেম্বর দুই মাসে। তবে অক্টোবর মাসে ২ হাজার ৫১৭ জন হাসপাতালে আসেন। আর নভেম্বরের দুই দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩৭ জন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, অক্টোবর থেকেই বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। নভেম্বরে এসেও তা অব্যাহত আছে। আগের বছরগুলোতে নভেম্বরে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমে গেলেও এবার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। বর্ষা ঋতু বিলম্বে শুরু হওয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুততার সঙ্গে এবং অধিক গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা দিতে প্রতিটি হাসপাতালকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে বরিশাল বিভাগে প্রথম ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। এর আগে বিভাগে ডেঙ্গুর ইতিহাস নেই। গত বছর এই বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩৮ হাজার ১৬৬ জন রোগী। মৃত্যু হয়েছিল ২১৪ জনের।