পল্লিচিকিৎসক হত্যা: দুই বছরেও জড়িতরা শনাক্ত-গ্রেপ্তার না হওয়ায় হতাশ পরিবার
বরিশাল নগরের গড়িয়ারপাড়ে পল্লিচিকিৎসক আবদুর রহমান খান হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পরও জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়নি। এতে বিচার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী আবদুর রহমানের বড় ছেলে মারজানুর রহমান। তিনি অবিলম্বে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
গতকাল রোববার দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান মারজানুর রহমান। এ সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মারজান বলেন, ২০২২ সালের বছরের ৭ অক্টোবর দিবাগত রাতে আবদুর রহমান খান গড়িয়ারপাড় বাজারে তাঁর ওষুধের দোকান বন্ধ করে বাড়িতে ফেরার জন্য রওনা হন। সিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, আবদুর রহমান দোকান বন্ধ করে মূল সড়কের পাশে গিয়ে ভ্যানে উঠে বসেন। ভ্যানটিতে তিনি একাই ছিলেন। এরপর তিনি ভ্যান থেকে বাড়িতে ঢোকার সরু রাস্তার পাশে নামেন। ভ্যানচালককে আবার গড়িয়ারপাড় বাজারের দিকে একা ভ্যান চালিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। ভ্যান থেকে আবদুর রহমান বাড়ির সামনের সড়কে নামলেও তিনি ওই রাতে বাড়িতে ফেরেননি। পরে তাঁর ছোট ছেলে আবদুল্লাহ মুঠোফোনে কল করলেও ফোন ধরেননি। কাজে ব্যস্ত আছেন ভেবে আবদুল্লাহ ঘুমিয়ে পড়েন। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আবদুল্লাহর মা (আবদুর রহমানের স্ত্রী) ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য ঘুম থেকে জেগে দেখেন আবদুর রহমান বাড়িতে ফেরেননি। তিনি আবদুল্লাহকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বাবার খোঁজ নিতে তাগিদ দেন। আবদুল্লাহ বাড়ির উঠানে গিয়ে দেখেন, তাঁর বাবার জুতা পড়ে আছে। এরপর বাড়ির মূল ফটকের বাইরে গিয়ে দেখেন বাড়ির নিরাপত্তাপ্রাচীরের সঙ্গে হেলান দিয়ে জবুথবু হয়ে বসে আছেন তাঁর বাবা। বাবার এমন অবস্থা দেখে আবদুল্লাহ চিৎকার দিলে স্বজন ও আশপাশের লোকজন এসে ধরাধরি করে বাড়িতে নিয়ে দেখেন আবদুর রহমান মারা গেছেন। বিষয়টি বিমানবন্দর থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্তে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় মারজানুর রহমান বাদী হয়ে বরিশাল বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
মারজানুর রহমান বলেন, থানায় মামলার অগ্রগতি না পেয়ে ২০২৩ সালের আগস্টে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়। এখন পর্যন্ত এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। তাই অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
মারজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবা একজন নিরীহ ও পরোপকারী ব্যক্তি ছিলেন। পল্লিচিকিৎসক হিসেবে এলাকায় তাঁর বেশ খ্যাতি ছিল। সাধ্যমতো তিনি মানুষকে চিকিৎসা দিতেন, গরিব রোগীদের বিনা মূল্যে ওষুধপত্র পর্যন্ত দিতেন। তাঁর সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না। শুধু একটি জমি নিয়ে কিছুটা বিরোধ ছিল। কী কারণে আমার নিরীহ বাবাকে হত্যা করা হলো, কিছুই বুঝতে পারছি না।’
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে মামলাটি পুরোপুরিই ক্লু-লেস। এ জন্য এ মামলায় কাউকে নামধারী আসামি করা হয়নি। এরপর বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাঁদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
কামরুল ইসলাম আরও বলেন, সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রমাণ না পাওয়া গেলে, তাঁদের গ্রেপ্তার করে চালান দেওয়া যায় না। এ বিষয়ে পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত তদারক করছেন বলেও জানান তিনি।