নিক্সনের হুমকির মুখে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদুল
সদরপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে নিজের ও কর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদুল ইসলাম। ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) হুমকির মুখে এ আশঙ্কায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের মরহুম সাংবাদিক শামসুদ্দীন মোল্লা মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানান তিনি।
ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে চেয়ারম্যান প্রার্থী শহীদুল ইসলাম লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন নিক্সন চৌধুরী তাঁকে বসে যাওয়ার জন্য প্রথমে অনুরোধ ও পরে হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু তিনি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রাখেন। এ অবস্থায় ২১ মে সকাল ১০টার দিকে নিক্সন চৌধুরী তাঁর বাড়িতে এসে জোর করে তাঁকে তুলে নিয়ে যান। এরপর তাঁকে ভাঙ্গায় তাঁর (নিক্সন) বাড়িতে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলতে বাধ্য করেন।
শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘তবে আমি বাড়িতে আসার পর হাজার হাজার জনতার অনুরোধে আবার নির্বাচন করার ইচ্ছা পোষণ করি। জনগণের চাপের মুখে ভোটের অধিকার রক্ষায় আমি নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’
শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘২৫ মে রাতে সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী ভাঙ্গায় তাঁর বাড়িতে সদরপুরের নেতা-কর্মী ও তাঁর সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী সভা করেন। ওই সভায় নিক্সন চৌধুরী আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। উপজেলার ৬৮ কেন্দ্রে আমার কোনো এজেন্ট রাখবেন না বলে হুমকি দেন। এমপির ওই বক্তব্যের পর আমার ৬৮টি কেন্দ্রের নেতা-কর্মীদের ওপরও প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিনিয়ত তাঁদের ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের সেন্টারে ঢুকতে দেবে না, এজেন্ট হতে দেবে না, প্রকাশ্যে ভোট সিল দেবে—এসব কথা বলে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে।’
শহীদুল ইসলাম আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, ‘এখন আমার জীবন নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি, আমি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারব কি না, তা জানি না। আমি আমার ও আমার নেতা-কর্মীদের জীবনের আশঙ্কাসহ বিভিন্নভাবে ভুগছি।’ এই নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও অবাধ হয়, এ জন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, সুশীল সমাজ, নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আবেদন জানিয়ে শহীদুল বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনে যদি আমি হেরে যাই, তাহলে আমি মাথা পেতে নেব। কিন্তু আমার ওপর এখন এত চাপ, জীবননাশের হুমকি। আমি এখন টিকে থাকতে পারছি না।’
সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক বলেন, ‘তাঁর (নিক্সন) ব্যাপারে কী বলব। একজন সংসদ সদস্য হয়ে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, উনি তা দিতে পারেন না। উনি নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন করেছেন। জননেত্রী মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনের প্রভাবের বাইরে থাকতে বলেছেন। কিন্তু উনি তা মানছেন না। উনি (নিক্সন) বলেছেন, শফি কাজী (নিক্সন–সমর্থিত প্রার্থী কাজী শফিকুর রহমান) এ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী নন, প্রার্থী উনি নিজে। উনি এখন এমপি থেকে উপজেলায় নেমে এসেছেন।’
শাহ ইশতিয়াক বলেন, ‘এসব কথা বলে সদরপুরের নির্বাচন ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছেন নিক্সন চৌধুরী। নির্বাচনের দিন শ্বেতসন্ত্রাস করার চেষ্টা করবে। অবিলম্বে নিক্সন চৌধুরীকে ভাঙ্গা-সদরপুর এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক, এটা আমাদের দাবি। উনি এ এলাকায় থাকলে পরিবেশ আরও নষ্ট হবে।’
শাহ ইশতিয়াককে সদরপুর-ভাঙ্গা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে, নিক্সন চৌধুরীর এ বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহ মো. ইশতিয়াক বলেন, ‘উনি আমাকে নিয়ে বহুবার এসব কথা বলেছেন। তারপরও আমি ভাঙ্গা গেছি। উনি আসলে একটা মানসিক ভারসাম্যহীন লোক। ওনার কথায় এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নাই।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু আলম রেজা, সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. ফরহাদ মিয়া, সদস্য কাজী কুদ্দুসুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন, সদরপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ইয়াকুব আলী মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে শহীদুলের বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে নিক্সন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শহীদুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন, গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে হেরেছেন। তিনি উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্র এজেন্ট দেবেন কীভাবে।’ নির্বাচনে পরাজিত হবেন জেনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এসব কথা বলছেন মন্তব্য করে নিক্সন চৌধুরী বলেন, তিনি আরেকটি সাংবাদ সম্মেলন করবেন ৩০ মে। ওই দিন বলবেন ‘নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে।’
‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এ মন্তব্য সম্পর্কে নিক্সন চৌধুরী বলেন, ‘আমি মানসিক ভারসাম্যহীন হলে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলাম কীভাবে। উনি (ইশতিয়াক) সন্ধ্যার পর কোথায় থাকেন, কী করেন, তা সবাই জানে। একজন নেশাগ্রস্ত লোকের পক্ষেই এসব কথা বলা সম্ভব।’
তৃতীয় ধাপে ২৯ মে সদরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান (মোটরসাইকেল প্রতীক) এবং উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম ওরফে বাবুল (আনারস প্রতীক)। এ নির্বাচনে কাজী শফিকুর রহমানকে সমর্থন দিয়েছেন নিক্সন চৌধুরী।