সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের প্রধান ফটকের সামনে প্রয়াত গুণী খান বাহাদুর সৈয়দ আবদুল মজিদ কাপ্তান মিয়ার ম্যুরাল স্থাপনের কাজ চলছে। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে ডিগ্রি কলেজে রূপান্তরের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা রাজা গিরিশচন্দ্র রায়কে পাশ কাটিয়ে কাপ্তান মিয়ার ম্যুরাল স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়ায় নানা মহলে সমালোচনা হচ্ছে।
গতকাল সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, তিনজন শ্রমিক কাপ্তান মিয়ার ম্যুরাল স্থাপনের কাজ করছেন। সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ মো. সালেহ আহমদের অনুরোধে তাঁরা ক্যাম্পাসে দুই লাখ টাকা ব্যয়ে কাপ্তান মিয়ার ম্যুরাল স্থাপনের কাজ এক সপ্তাহ আগে শুরু করেছেন। তিন মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা আছে।
এদিকে ম্যুরাল নির্মাণে কলেজের প্রতিষ্ঠাতাকে উপেক্ষা করার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কলেজের একাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সচেতন সিলেটবাসী। তাঁরা এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলছেন, একজনকে সম্মানিত করতে গিয়ে আরেকজনকে অসম্মানিত ও খাটো করা হয়েছে। দুই ব্যক্তির ম্যুরালই একই সময়ে স্থাপন করা যেত। আর যদি কোনো কারণে একজনেরই ম্যুরাল স্থাপন করতে হয়, সে ক্ষেত্রে কলেজের প্রতিষ্ঠাতাকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত ছিল। অথচ সেটি না করে বিব্রতকর একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে জানিয়ে বলেন, রাজা গিরিশচন্দ্র রায় ও সৈয়দ আবদুল মজিদ কাপ্তান মিয়া উভয়ই সিলেটের গর্ব। তবে কলেজের প্রতিষ্ঠাতাকে পাশ কাটিয়ে কলেজের উন্নয়নে ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তির ম্যুরাল নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া কোনোভাবেই উচিত হয়নি। হয়তো একসঙ্গে নতুবা প্রতিষ্ঠাতার ম্যুরাল নির্মাণের পর কাপ্তান মিয়ার স্মরণে আরেকটি ম্যুরাল তৈরি করা যেত।
এমসি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সালেহ আহমদ ২৪ আগস্ট অবসরে যাচ্ছেন জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনকে রাজা গিরিশচন্দ্র রায় ও সৈয়দ আবদুল মজিদ কাপ্তান মিয়ার ম্যুরাল স্থাপন করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তবে তারা শুধু কাপ্তান মিয়ার ম্যুরাল স্থাপন করবে বলে জানিয়েছে। এর মধ্যে কলেজের উচ্চমাধ্যমিক ৯১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা গিরিশচন্দ্রের ম্যুরাল স্থাপন করবেন বলে একটা সিদ্ধান্ত আমাকে জানান। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন চেয়ে আবেদনও পাঠিয়েছেন।’ দুটো ম্যুরালই হবে ভেবে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
সিলেটে শিক্ষা বিস্তারে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন রাজা গিরিশচন্দ্র সেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৮৯২ সালে তিনি এমসি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। অন্যদিকে সৈয়দ আবদুল মজিদ কাপ্তান মিয়া আসামের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আইনজীবী ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। ১৯১৯ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সিলেটে আনার পেছনেও কাপ্তান মিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এর আগে ১৯১৬ সালে এমসি কলেজকে ডিগ্রি কলেজে রূপান্তরের পেছনেও তাঁর অবদান রয়েছে।
সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কয়েক বছর আগে কাপ্তান মিয়া স্মরণে সিলেটে কিছু করার জন্য তাগিদ দিয়েছিলেন। তাই কাপ্তান মিয়ার অবদানের কথা মাথায় রেখেই এমসি কলেজে ম্যুরাল স্থাপনে সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিয়েছে। তবে রাজা গিরিশচন্দ্র রায়ের ম্যুরালও সিটি করপোরেশন কলেজে নির্মাণ করে দেবে। রাজা গিরিশচন্দ্র রায়ের ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। শিগগিরই তাঁর ম্যুরাল স্থাপনের কাজ শুরু হবে।