সীতাকুণ্ডে গঙ্গাপূজায় গিয়ে সাগরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা নৌঘাট এলাকায় গঙ্গাপূজা দেখতে গিয়ে সাগরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ওই দুই শিশু সাগরের জোয়ারের পানিতে নিখোঁজ হয়। অর্ধশতাধিক লোক পৌনে এক ঘণ্টা ধরে উপকূলে খোঁজাখুঁজির পর দুপুর ১২টার দিকে তাদের নিথর অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মারা যাওয়া দুই শিশু হলো খুশি রানী জলদাস (১২) ও কিশোরী বালা জলদাস (৮)। তাদের বাড়ি কুমিরা নৌঘাট এলাকার দক্ষিণ জেলেপাড়ায়। খুশি ওই এলাকার অনিল জলদাসের (সর্দার) মেয়ে এবং কিশোরী বালা একই এলাকার রানা জলদাসের মেয়ে।
স্থানীয় লোকজন জানান, রানা জলদাস জাহাজভাঙা কারখানার শ্রমিক। তাঁর তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে কিশোরী বালা সবার বড়। অনিল জলদাস এলাকার সর্দার। তাঁর সাগরে মাছ ধরার ব্যবসা রয়েছে। তাঁর চার ছেলেমেয়ের মধ্যে খুশি সবার ছোট।
খুশি ও কিশোরী স্রোতের টানে ডুবে যায়। দুই শিশু পানিতে ডুবে যাওয়ার খবরে এলাকার তরুণেরা পানিতে খুঁজতে শুরু করেন। এলাকার নারী-পুরুষেরা উপকূলে ভিড় করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ সকালে গঙ্গাপূজা ছিল। এবার পূজার আয়োজন হয়েছে কুমিরা খালের স্লুইসগেটের দুই পাশে। এ পূজা উপলক্ষে সকাল ৮টার পর থেকে সেখানে ভক্তদের ঢল নামে। কুমিরা ফেরিঘাটে উৎসবমুখর পরিবেশে যখন পূজা চলছিল, তখন এলাকার অনেক নারী, পুরুষ, শিশু গঙ্গাস্নান করতে যায়। কেউ কেউ কুমিরা জেটি দিয়ে সাগরে স্নান করতে যায়। এ সময় কুমিরা জেটির মাঝামাঝি সিঁড়ি দিয়ে নেমে পড়ে কয়েকজন। তাদের মধ্যে খুশি ও কিশোরী স্রোতের টানে ডুবে যায়। দুই শিশু পানিতে ডুবে যাওয়ার খবরে এলাকার তরুণেরা পানিতে খুঁজতে শুরু করেন। এলাকার নারী-পুরুষেরা উপকূলে ভিড় করেন। দুপুর ১২টার দিকে ওই দুই শিশুর নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে স্নান করতে নেমে দুই মেয়েশিশু মারা গেছে। স্থানীয় লোকজন লাশ উদ্ধার করে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছেন বলে জেনেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তবে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দুই শিশু মারা যাওয়ার কোনো খবর তিনি পাননি। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানান।
মেয়ের জন্য অনিলের বিলাপ
জেলে সর্দার অনিলের ছোট মেয়ে খুশি। যখন মেয়ে নিখোঁজ হয়, তখন তাকে খুঁজতে নেমে পড়েন অনিল। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে উপকূলে কাদামাটির ওপর বসে পড়েন অনিল। এরপর মাথায় হাত দিয়ে বিলাপ করতে থাকেন। ‘ওঝি রে, ও খুশিরে, তুই কন্ডে গেলি রে। ওঝি তোরে কডে পাইয়ুম রে। ওঝি তুই আঁরে ছারি কেন চলি গেলিরে। ওঝি তুই কই?’
অনিল বলেন, ‘সবাই আমরা স্লুইসগেটের কাছে ছিলাম। কোন ফাঁকে আমার মেয়েটি জেটির এখানে চলে আসে, টেরও পাইনি।’
যখন অনিল বিলাপ ধরে মেয়ের জন্য কাঁদছিলেন, তখন প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। উপকূলে তখন অনেক লোক ছিলেন।