স্কুলের কমিটি নিয়ে তর্ক, সহকর্মীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ শিক্ষকের
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার সুহরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে সহকর্মীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছেন এক শিক্ষক। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয়ে আসার পথে হরিদেবপুর এলাকায় তাঁর ওপর হামলা করা হয়। ঘটনার পর সশরীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষক।
মারধরের শিকার শিপন চন্দ্র রায় সুহরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক। তিনি শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক মো. সবুজ খানের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছেন। এর আগে গতকাল বুধবার বিদ্যালয়ে ওই শিক্ষকদের মধ্যে স্কুল পরিচালনা কমিটি নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা হয়েছিল।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুহরী মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠনের ব্যাপারে শিক্ষকদের অনেকে জানেন না। এবার গোপনে কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গতকাল গ্রন্থাগারে বসে কথা বলছিলেন কয়েকজন শিক্ষক। তখন কমিটি গঠন নিয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জুলেখা আক্তারের সঙ্গে অভিযুক্ত সবুজ খানের তর্ক হয়। তখন জুলেখা আক্তারের পক্ষ নেন শিপন চন্দ্র রায়। এতে সবুজ খান ক্ষিপ্ত হন এবং শিপনের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। পরে অন্য শিক্ষকেরা পরিস্থিতি শান্ত করেন। ওই ঘটনার জেরে আজ সকালে স্কুলে আসার পথে শিপনের ওপর সবুজ খানের নেতৃত্বে হামলা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
শিপন চন্দ্র রায় বলেন, গতকালের ঘটনার জের ধরে আজ সকালে স্কুলে আসার পথে হরিদেবপুর এলাকায় পাঁচ–সাতজন সন্ত্রাসী নিয়ে সবুজ খান অতর্কিতে হামলা করেন। তাঁকে কিল–ঘুষি, চড়থাপ্পড় মেরে আহত করা হয়। এ ব্যাপারে কোথাও অভিযোগ না করতেও হুমকি দেওয়া হয়। তিনি গলাচিপার ইউএনওর কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক সবুজ খান। তিনি বলেন, স্কুলের কমিটি গঠন নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে শিক্ষক শিপন তাঁর ওপর পানির বোতল নিক্ষেপ করেছিলেন বলে তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন।
গলাচিপার ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগে পেয়েছি। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধানশিক্ষক জুলেখা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর স্কুল পরিচালনা কমিটি হলেও কখন, কীভাবে হয়, শিক্ষকদের অনেকেই জানেন না। এবারও শোনা যাচ্ছে কমিটি হয়েছে। গতকাল গ্রন্থাগারে নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে কথা হচ্ছিল। তখন গোপনে কমিটি গঠনের বিষয়টি উঠলে কিছু শিক্ষক রেগে গিয়ে নানা কথা বলেন। প্রতিবাদ করায় শিপনের ওপর হামলা করা হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বে আছেন। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্তকর্তা ও ইউএনওকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্তকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি মুঠোফোনে শুনেছেন। আগামী রোববার কর্মস্থলে ফিরে তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলবেন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. রাজা মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্কুল পরিচালনা কমিটির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে চার–পাঁচ মাস আগে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সভাপতি জমিদাতা মো. আসাদুজ্জামান। তিনি এবার নিয়ে দুবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।’
জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, স্কুলের কমিটি নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল। ঘটনাটি জানার পর প্রধান শিক্ষক রাজা মিয়াকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ইউএনওর কাছেও লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। আশা করছেন, স্কুল কমিটি ও উপজেলা প্রশাসনের তদন্তে নিরপেক্ষ প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।