শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাংলোর সিসিটিভির হার্ডডিস্ক ‘গায়েব’

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাংলোছবি: প্রথম আলো

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাংলোর ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের হার্ডডিস্ক ‘গায়েব’ হয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার পর বাংলোর মালামালের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কমিটি গঠন করা হয়। এরপরই বিষয়টি সামনে আসে। কে বা কারা হার্ডডিস্কটি গায়েব করেছে, তা কেউই জানেন না।

বাংলোর মালামাল ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ রেজা সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, হার্ডডিস্কটি পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি আরও খুঁজে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপাচার্যের বাংলোতে গিয়ে দেখা যায়, সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করার ডেস্কটপ কম্পিউটারটি বন্ধ আছে। জানা গেছে, দুই তলাবিশিষ্ট উপাচার্যের বাংলোর ওপর তলায় শয়নকক্ষ। নিচতলার একটি কক্ষে উপাচার্য বিভিন্ন সময়ে দাপ্তরিক কাজ করেন, অন্যটি অতিথি কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই ভবনের বাইরের দেয়ালের চারদিকে ছয়টি, ফটকে একটিসহ মোট সাতটি সিসি ক্যামেরা আছে। এসব ক্যামেরা ভবনের উপাচার্যের ওই দাপ্তরিক কক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রিত হতো।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের খবরে ক্যাম্পাসে থাকা পুলিশ সদস্যরা ছাত্র-জনতার রোষানলে পড়ে উপাচার্যের বাসভবনের তালা ভেঙে ভেতরে আশ্রয় নেন। তাঁরা বাসভবনে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোশাক পরে ওই দিন সমন্বয়ক ও শিক্ষকদের সহায়তায় নিরাপদে রাতে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। তবে বাংলোতে কোনো লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। দুই দিন পর ৭ আগস্ট উপাচার্যের বাসভবনে কর্মরত দুজন কর্মচারী এসে কাপড়ের একটি স্যুটকেস নিয়ে যান ভবন থেকে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পাওয়ার পর ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক বদিউজ্জামান ফারুক গত ৯ সেপ্টেম্বর বাসভবনের কলাপসিবল গেটে তালা দেন বলে জানা যায়। এর আগে এক মাস পাঁচ দিন ধরে ভবনের কলাপসিবল গেটে কোনো তালা ছিল না। তবে ভবনের নিরাপত্তার জন্য বাসভবনের ফটকে দৈনিক তিন পালায় দুজন করে মোট ছয়জন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করছিলেন।

বাংলোতে দায়িত্বরত চারজন নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৭ আগস্ট বাসভবনে কর্মরত দুজন কর্মচারী একটি স্যুটকেস নিয়ে যান। আর ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এসে তালা দিয়ে যায়। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বরের আগে বাংলোতে আরও কেউ প্রবেশ করেননি বলে তাঁরা জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাসভবনে কর্মরত ও স্যুটকেস নিয়ে যাওয়া ওই দুই কর্মচারী প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্র-জনতার তোপের মুখে ৫ আগস্ট বিকেলে ক্যাম্পাসে থাকা পুলিশ সদস্যরা উপাচার্যের বাসভবনে এসে আশ্রয় নেন। ভবনের ওপরতলা ও নিচতলায় পুলিশ মধ্যরাত পর্যন্ত অবস্থান করছিলেন। এ সময় পুলিশ বাসভবনে থাকা উপাচার্য ও কর্মচারীদের কাপড় পরে ‘সাধারণের পোশাকে’ সেজে বাসভবন থেকে বের হয়ে যান। পুলিশ যাওয়ার আগেই সেদিন ওই কর্মচারীরাও ভবন থেকে চলে যান।

কর্মচারীরা আরও বলেন, গত ৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পদত্যাগকারী উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের নির্দেশে কর্মচারীরা উপাচার্যের কিছু ব্যক্তিগত পোশাক একটি স্যুটকেসে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আগে থেকে অবস্থান করা একজন লোকের কাছে পৌঁছে দেন। এরপর নতুন উপাচার্য আসার আগে কেউ ভবনে প্রবেশ করেছে কি না, তাঁরা তা জানেন না। এমনকি কর্মচারীরা নিজেরাও সেখানে যাননি বলে জানিয়েছেন। হার্ডডিস্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সাজেদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, সিসিটিভি হার্ডডিস্কসহ যেসব মালামাল পাওয়া যাচ্ছে না, তা তদন্ত করা হচ্ছে। এসব কাজে যারা জড়িত বা দোষী বলে প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।