চট্টগ্রামের আনোয়ারায় আবারও হাতির আক্রমণে একজন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাতে উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের মধ্য গুয়াপঞ্চক এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তির নাম আবদুর রহিম (৪৮)। তিনি স্থানীয় মৃত আবদুল আজিজের ছেলে। রহিম দেয়াঙ পাহাড়ের পাদদেশে একটি পোলট্রি খামার পরিচালনা করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যা সাতটার সময় বাড়ি থেকে পোলট্রি খামারে যাচ্ছিলেন আবদুর রহিম। ওই সময় পাহাড় থেকে নেমে আসা একটি হাতির সামনে পড়লে হাতি শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে তাঁকে। পরে রাত ১০টার দিকে তাঁর গোঙানির শব্দ শুনে লোকজন এগিয়ে এসে ঝোপের ভেতর থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আকবর (৩৮), সোমবার রাতে আনোয়ারা উপজেলার বটতলী আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার হালিমা খাতুন (৫৫) নামের এক নারী এবং এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গুয়াপঞ্চক গ্রামের কৃষক মো. দুলাল (৫০) হাতির আক্রমণে নিহত হন। এ নিয়ে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার দেয়াঙ পাহাড়ের আশপাশের এলাকায় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৬ বছরে হাতির আক্রমণে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বন বিভাগের লোকজন জানান, দেয়াঙ পাহাড়ে খাবার ও সুপেয় পানি পাওয়ায় চারটি হাতি অবস্থান নিয়েছে। এসব হাতিকে ঢিল ছোড়া হয়েছে অথবা উত্ত্যক্ত কিংবা বিরক্ত করা হয়েছে। অকারণে হাতি মানুষকে আক্রমণ করে না।
বন বিভাগ জানায়, আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলার দেয়াঙ পাহাড়ে হাতির অভয়ারণ্য না থাকলেও বন্য হাতি বংশপরম্পরায় এই পথ ধরে হাঁটাচলা করে। একবার হাতি যে জায়গা দিয়ে হাঁটাচলা করেছে, বারবার ওই জায়গা দিয়েই হাঁটাচলা করে। আর এতে বিঘ্ন ঘটলে হাতিরা মারমুখী হয়ে ওঠে। গাছপালা বেশি না থাকলেও একসময় দেয়াঙ পাহাড়ে হাতি স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটাচলা করতে পারত। কিন্তু কেইপিজেডসহ নানা স্থাপনা গড়ে তোলায় এখন তা পারছে না। এর ফলে কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে হাতির দল।
ওই সূত্র আরও জানায়, একটি হাতি দৈনিক ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা এবং ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার হাঁটে। আর খাবার খায় প্রায় ১৫০ কেজি। সব মিলিয়ে হাতির জন্য বিশাল জায়গা প্রয়োজন হলেও তা এখন নেই। এর ফলে হাতি জানমালের ক্ষতি করছে।
জানতে চাইলে জলদী বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, দেয়াঙ পাহাড়ের আশপাশের এলাকায় হাতির আক্রমণে হতাহতের ঘটনায় তথ্য নিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।