কোরবানির ঈদের চেনা দৃশ্য হচ্ছে ট্রাকভরে গরু যায় এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে। এবারের দৃশ্য ভিন্ন। একইভাবে ঠাসাঠাসি করে ট্রাক ভরে মানুষ ফিরছেন বাড়িতে। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখা গেছে। আটকাতে পারলে হাইওয়ে থানার পুলিশ ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রী পরিবহনের অভিযোগে ট্রাকচালকের বিরুদ্ধে মামলাও দিচ্ছে।
রাজশাহীর পুঠিয়া থানার শিবপুরহাট এলাকায় অবস্থিত হাইওয়ে থানা। রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশে পুঠিয়া থানার অন্তর্গত শিবপুরহাটে অবস্থিত হলেও এই থানার নাম পবা হাইওয়ে থানা। এখানেই পুলিশ শ্রমিকদের ট্রাক আটকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু মিনিটে মিনিটে ট্রাক ঢোকার কারণে পুলিশ সব ট্রাক আটকাতে পারছে না।
এই ট্রাকে যাঁরা ফিরছেন, কোনোমতেই তাঁদের এক মিনিটের জন্য বসার সুযোগ নেই। এ সময়ে চলছে ভ্যাপসা গরম, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি, স্বাভাবিকভাবেই গরমে মানুষের হাঁসফাঁস করা অবস্থা। এরই মধ্যে মাথার ওপর কড়া রোদ নিয়ে ট্রাকে করে ফিরছেন তাঁরা। ঢাকা থেকে রাজশাহী বা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌঁছাতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় লাগছে। এর মধ্যে শুধু এক বেলা খাওয়ার জন্য বিরতি দেওয়া হচ্ছে।
এভাবে ট্রাকে দাঁড়িয়ে ফেরার জন্য প্রতিজন শ্রমিককে ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই শ্রমিকেরা সবাই ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ঈদের সময় প্রতিদিন শত শত ট্রাক শ্রমিকদের নিয়ে রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঢুকছে।
ইসমাইল হোসেন (২৫) এই ট্রাকে গতকাল শনিবার বাড়ি ফিরেছেন। তিনি বলেন, শুক্রবার রাত নয়টায় ট্রাকে উঠেছেন, পরদিন শনিবার দুপুর ১২টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৌঁছেছেন। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে কষ্ট করে ট্রাকে কেন ফিরছেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা শেষ সময়ে আসি। তখন বাসের টিকিট পাওয়া যায় না। পেলেও একটা টিকিটের দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা। আমরা রাজমিস্ত্রির কাজ করি। এত টাকার টিকিটে আসার মতো আমাদের সংগতি নেই। তার বিনিময়ে এই কষ্ট সহ্য করি। এই ১৫ ঘণ্টা গরু-ছাগলের মতো একজনের গায়ের সঙ্গে আরেকজনের গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। পা টনটন করে, কিন্তু বসার উপায় থাকে না। তবু একটা ছেলে আছে, ঈদে না এসে পারি না।’
রুবেল ইসলামের (৩৫) বাড়িও একই এলাকায়। তিনিও ফিরেছেন ট্রাকে। বললেন, ‘শিবগঞ্জের এত লোক ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন যে ঈদের সময় আর টিকিট পাওয়া যায় না। ট্রাকে যেভাবে উঠি, সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বসার পজিশন পাওয়া যায় না।’
পবা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোফাককারুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণভাবে ট্রাকে মানুষ পরিবহনের অভিযোগে ৪০টি মামলা দেওয়া হয়েছে। আর এত স্রোতের মতো ট্রাক আসছে, পুলিশের পক্ষে সব কটি আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোকে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এই মামলায় তাদের শুধু জরিমানা হবে। ১৫ দিনের মধ্যে জরিমানা দিয়ে এসে তাঁরা গাড়ির কাগজ ফেরত নিয়ে যাবেন। একবার অপরাধের জন্য ৩ হাজার এবং দুবার অপরাধ করলে ৬ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।