তিন মাস পর ক্যাম্পাসে এসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে উপাচার্য

উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা বিক্ষোভ শুরু করলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। আজ বৃহস্পতিবার সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেছবি: প্রথম আলো

সিলেটের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এইচ এম এনায়েত হোসেন তিন মাস পর ক্যাম্পাসে এসে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের তোপের মুখে পড়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের পাহারায় উপাচার্য ক্যাম্পাসে এলে তাঁকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। পরে সেনাসদস্যরা এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

বিক্ষুব্ধরা জানান, দুই বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে পারছেন না। উপাচার্যের কাছে গিয়েও তাঁরা এ বিষয়ে সুরাহা পাননি। এ জন্য তাঁরা ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে উপাচার্য এনায়েত হোসেন, রেজিস্ট্রার আবুল কালাম মো. ফজলুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ মো. শাহ আলমের পদত্যাগ চেয়ে কক্ষগুলোতে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তিন মাস পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে তালা ভেঙে তাঁর কার্যালয়ে বসেন। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার পদত্যাগ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, উপাচার্য আসার খবর পেয়ে সকাল ১০টার দিকে ‘বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা’ ক্যাম্পাসে ছুটে আসেন। এ সময় সেখানে থাকা উপাচার্যের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত দুজন কর্মচারী বাধা দেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় উপাচার্য তাঁর কক্ষ থেকে সরে নিচতলায় চলে যান। সেখানে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁকে অবরুদ্ধ করেন। বিক্ষুব্ধরা তাঁদের সমস্যার সমাধান না করে উপাচার্যকে ক্যাম্পাস থেকে যেতে দেওয়া হবে না বলেও ঘোষণা দেন।

বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধ ও চাকরি নিয়মিতকরণের দাবিতে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচি। আজ বৃহস্পতিবার সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে দুপুর ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পাসে আসেন। তাঁরা উপাচার্য এবং স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিক্ষুব্ধদের বলা হয়, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সবার অংশগ্রহণে বৈঠক করা হবে। ওই বৈঠকে সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে।

সেনাবাহিনীর আশ্বাসে বেলা দুইটার দিকে নিজেদের কর্মসূচি থেকে সরে আসেন বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক মাইদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেনাবাহিনীর বক্তব্যে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। তাই আজকের অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে এসেছি। বৈঠকে সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীর সময়ে ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ২২০ জনকে ছয় মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে (অ্যাডহক) নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে মেয়াদ অনূর্ধ্ব ছয় মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্ধারিত সময় পূর্ণ হওয়ার পর তাঁদের চাকরি নিয়মিত না করে উপাচার্য নিজ ক্ষমতায় একাধিকবার তাঁদের অ্যাডহকে নিয়োগ দেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদিত পদ ছিল ১১২টি। এ অবস্থায় ইউজিসি অস্থায়ীভাবে আর কোনো নিয়োগ না দেওয়া এবং যেসব পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের চাকরির মেয়াদ আর না বাড়ানোর সুপারিশ করে।

মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীর স্থলাভিষিক্ত হয়ে উপাচার্য এনায়েত হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেই অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ছাড়া অন্য সবার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেন। একাধিকবার তাঁরা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানালেও ইউজিসির সুপারিশের কথা বলে উপাচার্য তাঁদের চাকরি স্থায়ী করেননি।