দুর্নীতির অভিযোগে বদলি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ পাওয়া কর্মকর্তাই হলেন মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) রাজশাহী কার্যালয়ের পরিচালকের পদ ফাঁকা হলে তৎকালীন উপপরিচালক আলমগীর কবীর কোনো আদেশ ছাড়াই পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাঁকে পরিচালক পদে পদায়ন করতে সুপারিশ করেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল)। কিন্তু যোগ্যতা না থাকায় পদায়ন হননি। পরে দুর্নীতির অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে বদলি হয়েছিলেন আলমগীর কবীর। ওই ঘটনার পাঁচ মাস পর গতকাল সোমবার তাঁকে নতুন করে উপপরিচালক পদে পদায়ন করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ-২ শাখা থেকে তাঁকে মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক পদে প্রেষণে পদায়ন করা হয়। এ আদেশে স্বাক্ষর করেন সরকারি কলেজ-২–এর উপসচিব মো. মাহবুব আলম। দুর্নীতির অভিযোগে তাৎক্ষণিক বদলি হওয়া ওই কর্মকর্তা বদলির পাঁচ মাস সাত দিনের মাথায় এ আদেশে আবার ফিরে এলেন।
আলমগীর কবীর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক হিসেবে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যোগদান করেছিলেন। বহুল আলোচিত ডিগ্রি স্তরের তৃতীয় শিক্ষকের এমপিওভুক্তির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পরে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা এমপিওভুক্ত হবেন না। কিন্তু পরিপত্র লঙ্ঘন করে প্রাপ্য না হলেও তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত ও পদোন্নতি দিয়েছিলেন আলমগীর কবীর। এ নিয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুন মাউশির মহাপরিচালককে তদন্তের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলাবিষয়ক শাখা। পাশাপাশি তাঁকে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ দেওয়া হয়।
২২তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের এই কর্মকর্তাকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে বদলি করা হয়। তবে কলেজের একটি সূত্র জানিয়েছে, পাঁচ মাস সাত দিন কলেজে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি মাউশির উপপরিচালক পদে ফিরতে ঠিকমতো ক্লাস নেননি।
জানতে চাইলে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোল্লা মো. রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দুই মাসের কম সময়ে যোগদান করেছেন। তিনি যোগদান করার পর ভারতে চিকিৎসা ছুটি শেষে কলেজে যোগদান করেন আলমগীর কবীর। এরপর কোনো ক্লাস নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বলতে পারবেন। তবে তিনিও এখন ঢাকায় প্রশিক্ষণে আছেন।’
রাজশাহী মাউশির একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিচালক অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান শাহ গত ১০ জানুয়ারি অবসরপূর্ব (পিআরএল) ছুটিতে যান। তখন দাপ্তরিক কোনো আদেশ ছাড়াই উপপরিচালক আলমগীর কবীর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অনুমোদন ছাড়াই আর্থিক ক্ষমতা ব্যবহার করেন। এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারি স্ববেতনে পরিচালক হতে আবেদন করেন। কিন্তু নীতিমালা অনুযায়ী শুধু অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারাই পরিচালক হতে পারেন। এরপরও তাঁর আবেদনে সুপারিশ করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এতে তিনি সচিবকে লিখেন, ‘শূন্য পদ সাপেক্ষে পদায়নের ব্যবস্থা নিন।’ কিন্তু নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকায় তিনি পরিচালক হতে পারেননি।
একই সময় আলমগীর কবীরের বিরুদ্ধে জাল সনদে এমপিওভুক্তি, বিধি লঙ্ঘন করে তৃতীয় শিক্ষককে এমপিওভুক্তি দেওয়া নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় রাজশাহীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি কমিটিকে। একই সঙ্গে আলমগীর কবীরকে তাৎক্ষণিকভাবে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে বদলি করা হয়।
সূত্র জানায়, বদলি হওয়ার পর ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের আগপর্যন্ত চুপচাপ ছিলেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি আবার রাজশাহীর উপপরিচালক পদে ফিরতে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করতে শুরু করেন। এর মধ্যে গতকাল সোমবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ-২ শাখা থেকে তাঁকে আবার মাউশির রাজশাহীর উপপরিচালক পদে প্রেষণে পদায়ন করা হয়।
এ বিষয়ে আলমগীর কবীর মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর রাজশাহীতে বদলি হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে বিমুক্ত হয়ে মাউশির রাজশাহীতে যোগদান করবেন। কলেজে থাকতে ক্লাস না নেওয়ার ব্যাপারে জানতে হলে কলেজের অধ্যক্ষকে জিজ্ঞেস করতে হবে বলে জানান। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উড়োচিঠির মাধ্যমে অভিযোগ করা হয়েছিল। অভিযোগকারীকেই পাওয়া যায়নি। তদন্তে কী হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, সেটা তদন্ত কর্মকর্তাই বলতে পারবেন।
অভিযোগের বিষয়ে গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো. মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তবে প্রতিবেদনে কী উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা প্রকাশ করা যাবে না।