মেঘনায় ড্রেজারডুবি: দুজনের লাশ উদ্ধার, তিনজন এখনো নিখোঁজ
ভোলা সদর উপজেলার মেঘনা নদীতে একটি ড্রেজার ডুবে চালক, কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিখোঁজের ঘটনায় দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে মালিকপক্ষের ভাড়া করা ডুবুরি দল ডুবন্ত ড্রেজারটি থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে। এর আগে নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে গতকাল দিনব্যাপী যৌথভাবে চেষ্টা চালায় ভোলার ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের দল। এ দুর্ঘটনায় আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
উদ্ধার করা দুজন হলেন সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের বাঘারহাট গ্রামের বাসিন্দা নুরে আলম (৪১) ও আরিফুল ইসলাম (২১)। অন্যদিকে নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন মো. সিয়াম (২২), হারুনুর রশিদ (৪০) ও মো. তানজিল (২১) নামের তিন শ্রমিক।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গত রোববার দিবাগত রাতে ইলিশা ইউনিয়ন ও কাচিয়া ইউনিয়নের সীমানায় গাজীপুর চরসংলগ্ন মেঘনা নদীতে আফসানা নামের বালুকাটা ড্রেজারটি ডুবে যায়। রাতে মালবাহী কোনো লাইটার জাহাজের ধাক্কায় ড্রেজারটি ডুবে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই সময় চালক-কর্মকর্তাসহ পাঁচজন বের হতে পারেননি।
কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, গতকাল সারা দিন ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড চেষ্টা করে বিকেলের দিকে ডুবে যাওয়া ড্রেজারের সন্ধান পায়। নিখোঁজ শ্রমিকদের আত্মীয়স্বজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভাড়াটে ডুবুরি দল নামাতে বাধ্য হয় মালিকপক্ষ। দলটি রাত তিনটা পর্যন্ত চেষ্টা করে দুজনের লাশ উদ্ধার করেছে। আজ মঙ্গলবার আবার তাঁদের উদ্ধার তৎপরতা চালানোর কথা।
এদিকে ড্রেজারডুবির ঘটনায় নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের বাড়িতে মাতম চলছে। গতকাল নিখোঁজ হারুনের মেয়ে আঙ্কুরা বেগম (১৯) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গত বৃহস্পতিবার দিনের ভাগে তাঁর বাবা ফোন করে মুঠোফোনে রিচার্জ করে দিতে বলেন। এরপর কারও সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। হারুনের স্ত্রী নুর জাহান আহাজারি করে বলেন, ‘আমার তিন মাইয়া। ওর বাহের কিছু অইয়া গেলে, ওরা তো এতিম অইয়া যাইবোগো। ও আল্লাহ! আমার ক্যামনে চলব, কে দরব সংসারের হাল!’
ডুবে যাওয়া ড্রেজারটি খুঁজে পেতে গতকাল সারা দিন লেগে যায়। আজ ডুবুরিরা আবার উদ্ধারকাজ শুরু করবেন। তবে নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।জেলা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা পরেশ চন্দ্র পাল
এ দুর্ঘটনার পর ভোলা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন জানিয়ে মালিক মো. শাহে আলম বলেন, এক মাস ধরে মেঘনা নদীতে ড্রেজার দিয়ে সরকারি ইজারাদারের বালু কাটা হচ্ছিল। গত শনিবার তিনি ড্রেজারে না গিয়ে তাঁর ভাতিজা আরিফকে পাঠিয়েছিলেন। গত রোববার থেকে তিনি নিখোঁজ। গতকাল রাতে তাঁর ভাতিজার (আরিফুর) লাশ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জেলা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা পরেশ চন্দ্র পাল জানান, ডুবে যাওয়া ড্রেজারটি খুঁজে পেতে গতকাল সারা দিন লেগে যায়। আজ ডুবুরিরা আবার উদ্ধারকাজ শুরু করবেন। তবে নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান। তিনি বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।