অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বরিশালে ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬৬৬
বরিশালে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৬৬ জন রোগী। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরিশাল বিভাগে ২৩ জনের মৃত্যু হলো। আর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন ৩ হাজার ৩৯৮ জন। তাঁদের মধ্যে ২৮৫ জন এখনো চিকিৎসাধীন।
সর্বশেষ গতকাল সোমবার রাতে বিপ্লব সমাদ্দার (২৮) নামের এক তরুণ বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তিনি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের বিকাশ সমাদ্দারের ছেলে। সোমবার বিকেলে ডেঙ্গু নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এবার বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে এসে বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। চলতি বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ও দীর্ঘ সময় তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় শুরুর সাত মাস ডেঙ্গু খুব একটা মাথাচাড়া দেয়নি। কিন্তু সেপ্টেম্বরে এসে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। এখন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বিভাগে ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৩ অক্টোবর একজন, ৫ অক্টোবর দুজন ও ৭ অক্টোবর অন্য দুজনের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া ২৩ জনের মধ্যে ১৭ জনই বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। বরগুনায় ও পটুয়াখালীতে দুজন করে এবং ভোলা, পিরোজপুরে একজন করে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। এই সাত দিনে বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬৬ জন।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের ছয় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৩ জন। এ নিয়ে চলতি বছর বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৩৯৮ জন। এর মধ্যে এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৮৫ জন রোগী।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে বরগুনা জেলায়। সেখানে শুরু থেকেই রোগীর সংখ্যা বেশি এবং তাঁরা সবাই স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। জেলাটি ডেঙ্গু হটস্পট হিসেবে বিবেচনা করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। মোট আক্রান্ত ৩ হাজার ৩৯৮ জনের মধ্যে ৯৫৮ জনই বরগুনার, মারা গেছেন ২ জন। দ্বিতীয় বরিশাল জেলায় ৯২২ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ১৭ জন। এ ছাড়া পটুয়াখালীতে ৬১০, পিরোজপুরে ৪৭৩, ভোলায় ৩২৯ এবং সবচেয়ে কম ঝালকাঠিতে মাত্র ৯৭ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন। ঝালকাঠিতে এখনো কোনো ডেঙ্গু রোগী মারা যাননি।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছর শুরু থেকে বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়। জুনে তা চূড়ায় ওঠে। কিন্তু এবার বছরের শুরুতে প্রকোপ কম থাকলেও সেপ্টেম্বরে এসে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পরিস্থিতি জটিল হতে থাকে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়। এখনো তা অব্যাহত আছে। গত বছর এই বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩৮ হাজার ১৬৬ রোগী। মৃত্যু হয়েছিল ২১৪ জনের।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে বিভাগের ছয় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন ১ হাজার ৬৭৭ জন। বাকি ১ হাজার ৯৫ জন আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন। আর চলতি মাসের সাত দিনে ৬৬৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, বরিশালে গত বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু রোগী কম থাকলেও শেষ সময়ে এসে তা বাড়ছে। বিষয়টি উদ্বেগের। মূলত বর্ষা প্রলম্বিত হওয়ায় মৌসুমের শেষ সময়ে এসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে।