শয্যাসংকটে মেঝেতে চিকিৎসা

প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না। এখানের এক্স–রে যন্ত্র ১৬ বছর ধরে বিকল।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যার অভাবে মেঝেতে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে পাঁচ বছর আগে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু আজও ৫০ শয্যার জনবল কাঠামো অনুযায়ী চিকিৎসক ও কর্মকর্তা–কর্মচারী নিয়োগ করা হয়নি। এমনকি ৩১ শয্যার জনবল কাঠামো অনুযায়ীও যতজন চিকিৎসক থাকার কথা ততজনও নেই। ফলে এই হাসপাতালে এসে রোগীরা যথাযথ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। শয্যা না থাকায় অনেক রোগী মেঝেতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স–রে যন্ত্রটি ১৬ বছর ধরে বিকল থাকায় রোগীদের বেশি টাকা খরচ করে বাইরে এক্স–রে করাতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ২০১৮ সালের ৬ জুন ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালুর জন্য ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু গত ৫ বছরেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসকসহ জনবল পদায়ন এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়নি। এ কারণে এখানে ৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু হয়নি।

২৭ এপ্রিল সরেজমিন দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ সবখানেই রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা কর্মকর্তা সাবা মজিদ, বহির্বিভাগে মোস্তাফিজুর রহমান, ওমর ফারুখ, রাগবির হাসান ও ডেন্টাল সার্জন কবিতা খাতুন রোগী দেখছেন।

২৭ এপ্রিল এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী বলেন, জীবননগর উপজেলা ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা সদর ও দামুড়হুদা এবং ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে তাঁরা এসেছেন। ৩১ শয্যার এই হাসপাতালে বৃহস্পতিবার ৬৯ জন রোগী ভর্তি ছিল, যা নির্ধারিত শয্যার দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। যে কারণে অন্তর্বিভাগে শয্যা না পেয়ে ভর্তি রোগীদের প্রায় অর্ধেককে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।

জীবননগর উপজেলা ছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকে রোগী আসার কারণে চাপ একটু বেশিই থাকে। ৫০ শয্যা অনুযায়ী জনবল ও চিকিৎসা উপকরণ পেলে সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।
সেলিমা আখতার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, জীবননগর

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনের তিনতলায় সিঁড়ির মুখেই মেঝেতে জীবননগর উপজেলার বাঁকা আঁশতলাপাড়ার বাসিন্দা রেজাউল হক (২৮), আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের শরিফুল হক (৪০) এবং সেনেরহুদা গ্রামের ৮ মাস বয়সী শিশু রাফা মণির চিকিৎসা চলছিল। জ্বরে আক্রান্ত এই তিনজনকে বুধবার বিভিন্ন সময় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাফা মণির মা চম্পা খাতুন বলেন, ‘গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কয়েক দিন আগে মেয়েকে এখানে ভর্তি করিয়েছিলাম। তবে নিবিড় চিকিৎসাসেবার কারণে মেয়েটি এখন অনেক সুস্থ।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনবলকাঠামো নীতিমালা অনুযায়ী ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ (ইউএইচএফপিও) চিকিৎসকের মোট ২৪টি পদ থাকে। এখানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ আছেন মাত্র সাতজন চিকিৎসা কর্মকর্তা। এরা হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিমা আখতার, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) হোসনে আরা , জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) শ্যামল কুমার পাল, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেশিয়া) হুমায়ুন কবির , সহকারী ডেন্টাল সার্জন কবিতা খানম এবং চিকিৎসা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ও ওমর ফারুখ কর্মরত আছেন। মোস্তাফিজুর রহমান এক বছরের বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত আরএমও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই হাসপাতালে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি ১৬ বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। এ কারণে রোগীদের বিভিন্ন রোগনির্ণয় কেন্দ্রে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে এক্স-রে করাতে হচ্ছে। এতে নিম্ন আয়ের পরিবারের রোগীর স্বজনদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। একজন ডেন্টাল সার্জনকে এখানে পদায়ন করা হলেও ডেন্টাল চেয়ার না থাকায় ডেন্টাল ইউনিটে রোগীদের আধুনিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

ভারপ্রাপ্ত আরএমও মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এক্স-রে মেশিন ও ডেন্টাল চেয়ার চেয়ে সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে প্রতি মাসেই চিঠি দেওয়া হয়। লাইন ডিরেক্টর স্যার বিষয়টি অবগত হয়েছেন এবং শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশ্বাস মিলেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সেলিমা আখতার জানান, জীবননগর উপজেলা ছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকে রোগী আসার কারণে চাপ একটু বেশিই থাকে। ৫০ শয্যা অনুযায়ী জনবল ও চিকিৎসা উপকরণ পেলে সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।