মামলার ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা আদায়, ওসি ও বিএনপির নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ

চাঁদাবাজি
প্রতীকী ছবি

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে এক প্রবাসীকে মামলার ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তার করে আজ বুধবার আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

ওই বিএনপি নেতার নাম দেলোয়ার হোসেন ওরফে কবির (৪০)। তিনি চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তবে এ চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চুনারুঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেলোয়ার তাঁর নাম ভাঙিয়ে এ চাঁদাবাজি করেছেন। তবে এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

থানা-পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চুনারুঘাট উপজেলার গোবরখলা গ্রামের বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সুজাতুল হক ভূঁইয়া গত ২৬ নভেম্বর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমেরিকা যান। যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগের দিন ওসি মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সুজাতুলকে থানায় এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ওসি ফোনে বলেন, সুজাতুলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে। তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।

এসব শুনে সুজাতুল তাঁর এক আত্মীয়কে থানায় পাঠান। ওসি ওই আত্মীয়কে বলেন, সুজাতুল দেশে বালু ও আগর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি তাঁদের খুশি না করে চুপিচুপি বিদেশ যাবেন তা মেনে নেওয়া যাবে না। এ কথা শুনে সুজাতুল ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি ওসির কাছে জানতে চান তাঁর ওপর কোনো মামলা আছে কি না। তখন ওসি বলেন, মামলা নেই, তবে মামলা হতে কতক্ষণ। তখন ভয়ে সুজাতুল ওসির কথামতো চলতে রাজি হন। তখন ওসি বলেন, ২ লাখ টাকা তিনি যেন দেলোয়ার হোসেনের কাছে বুঝিয়ে দেন। ওসির কথামতো সুজাতুল তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের এক লোককে দিয়ে ২ লাখ টাকা দিয়ে ওই বিএনপি নেতার কাছে পাঠান।

এদিকে সুজাতুল হক যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে গত ২ ডিসেম্বর পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। খবর পেয়ে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল হক চুনারুঘাট থানার ওসির কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। তখন ওসি তাঁকে বলেন, দেলোয়ার তাঁর নাম ভাঙিয়ে এ টাকা নিয়ে থাকতে পারেন। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে গতকাল মঙ্গলবার রাতে দেলোয়ারকে তাঁর বাড়ি থেকে আটক করে চুনারুঘাট থানা-পুলিশ। তবে পুলিশ তাঁকে চাঁদাবাজির অভিযোগ না দিয়ে বুধবার হবিগঞ্জ আদালতে ৫৪ ধারায় হাজির করেন। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান।

এ বিষয়ে সুজাতুল হক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি প্রকাশের পর ওসি আমাকে পুনরায় ফোন করে অভিযোগ না করার অনুরোধ করছেন। পাশাপাশি ওসি বলেন, “আমি গরিব মানুষ। আপনাদের কাছ থেকে পেয়েই চলতে হয়।” তবে আমি পুলিশের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছি। তিনি কী ব্যবস্থা নেন সেই অপেক্ষায় আছি।’

অভিযোগের বিষয়ে চুনারুঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার নাম ভাঙিয়ে দেলোয়ার টাকা নিয়েছেন। এর সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দেলোয়ারকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। দেলোয়ারের বিরুদ্ধে কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ না করায় পুলিশ তাঁকে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে।’

পুলিশ সুপার রেজাউল হক বলেন, ঘটনার সঙ্গে ওসি জড়িত কি না তা তদন্ত করে দেখছেন। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওসি নজরুল ইসলাম প্রায় দুই মাস আগে চুনারুঘাট থানায় যোগ দেন। এর আগে তিনি মৌলভীবাজারের রাজনগর থানায় ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে গরু, ছাগল ও মোরগ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।