বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠে মারধরের শিকার, ৪৪ মিনিট আটকে রাখলেন শিক্ষার্থীরা
ট্রেনে টিকিট না কেটে ভ্রমণ করায় দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের সঙ্গে ট্রেনের টিকিট কালেক্টরের ধস্তাধস্তি হয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে ছেড়ে আসা একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দিনাজপুর রেলস্টেশনে ট্রেনটি প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা আটকে রাখেন। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
ওই ছাত্রের নাম আবদুর রাজ্জাক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় লেভেলের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। তিনি অভিযোগ করেছেন, টিকিট দেখাতে না পারায় মতিউর রহমান নামের একতা এক্সপ্রেসের একজন টিকিট কালেক্টরসহ দুজন তাঁকে মারধর করেছেন।
আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সকালে এক আত্মীয়সহ ঢাকা থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন তিনি। যাত্রী দুজন হলেও বৈধ টিকিট ছিল একটি। সেটিও ছিল তাঁর ওই আত্মীয়ের কাছে। কাউন্টারে নিজের জন্য টিকিট না পাওয়ায় তিনি আত্মীয়কে নির্দিষ্ট বগিতে তুলে দিয়ে নিজে উঠে পড়েন ‘ঞ’ বগিতে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর টিকিট কালেক্টর মতিউর রহমান টিকিট দেখতে চাইলে আবদুর রাজ্জাক জানান, কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে তিনি ট্রেনে উঠে পড়েছেন। মতিউর তাঁর কাছে ভাড়া চাইলে তিনি বলেন, তাঁর কাছে টাকার স্বল্পতা আছে। যতটুকু আছে তা–ও ‘চ’ বগিতে রাখা ব্যাগে আছে। ভিড়ের কারণে আনতে পারছেন না। পরে টিকিট কালেক্টর তাঁকে টিকিট কাটার জন্য বলতে থাকলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়।
আবদুর রাজ্জাক অভিযোগ করেন, ‘একপর্যায়ে আরও একজন টিকিট কালেক্টর আসেন এবং আমাকে মারধর করে মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর রেল পুলিশের সহায়তায় মুঠোফোন ফেরত পেয়ে আমি ফেসবুকে লাইভে এসে ঘটনার কথা জানিয়ে বিচার দাবি করি।’
এদিকে ফেসবুক লাইভের সেই ভিডিও দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে দিনাজপুর রেলস্টেশন চত্বরে জড়ো হতে শুরু করেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ালে শিক্ষার্থীরা ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে অবরোধ করেন ও স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় ট্রেন ছাড়তে দেরি হওয়ায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। পরে দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট আলোচনা করে বিচারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। ৪৪ মিনিট অবরোধ শেষে রাত ৯টা ১৪ মিনিটে দিনাজপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যায় একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি।
দিনাজপুর রেলস্টেশন সুপার এ বি এম জিয়াউর রহমান বলেন, ‘যত দূর জানতে পেরেছি ওই শিক্ষার্থীর কাছে বৈধ টিকিট ছিল না। তাঁকে টিকিট কাটতে বলায় উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’