রংপুরে পুলিশের উপকমিশনারের বিরুদ্ধে ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগ করা ব্যবসায়ী হত্যাচেষ্টা মামলায় কারাগারে
রংপুর মহানগর পুলিশের সদ্য প্রত্যাহার হওয়া উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগ করা ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ রোববার রাত পৌনে ১০টায় রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সোয়েবুর রহমান এই আদেশ দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে হওয়া হত্যাচেষ্টা মামলায় রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লিপি খানকে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁকে রংপুর মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করা হয়।
আদালতে লিপি খানের আইনজীবী জহুরুল আলম ও রাতুজ্জামান রাতুল জামিন আবেদন করেন। এ সময় লিপি খান আদালতকে বলেন, তিনি একজন ব্যবসায়ী। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু পুলিশের উপকমিশনার শিবলী কায়সারসহ কয়েকজন তাঁর কাছে ঘুষ দাবি করে তাঁকে ফাঁসিয়েছেন। তবে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন কোর্ট পুলিশের উপপরিদর্শক (সিএসআই) রফিকুল ইসলাম। শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত ১৩ নভেম্বর রংপুরের হারাগাছের ব্যবসায়ী লিপি খান ভরসার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলার পর রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক অমিত বণিকের মাধ্যমে লিপি খানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ ওঠে পুলিশ কর্মকর্তা শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ১১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তরে শিবলী কায়সারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন লিপি খান। অভিযোগের সঙ্গে অমিত বণিকের সঙ্গে ঘুষ দাবির কথোপকথনের কয়েকটি অডিও রেকর্ড জমা দেন লিপি খান।
এরপর গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অমিত বণিককে থানায় ডেকে নেয় কোতোয়ালি থানার পুলিশ। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে লিপি খানের পক্ষে কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে যান তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পলাশ হাসান (২৭)। ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে থানায় যান উপপুলিশ কমিশনার শিবলী কায়সার। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রের ভাষ্য, শিবলী কায়সার থানায় ঢুকেই পলাশ হাসানের ওপর চড়াও হন এবং তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে কর্তব্যরত কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে তাঁকে (পলাশ) গুলি করতে উদ্যত হন। পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে থানায় মামলা নেওয়া হলেও এতে আসামি করা হয় শুধু অমিত বণিককে। মামলায় আগে থেকেই থানা হেফাজতে থাকা অমিত বণিককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘুষ–বাণিজ্য ও থানায় মামলার বাদীকে মারধরের অভিযোগ ওঠার পর শিবলী কায়সারকে শনিবার দুপুরে রংপুর মহানগর পুলিশ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশের সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে লিপি খানের বিরুদ্ধে মামলার বিররণীতে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই বিকেলে রংপুর নগরের গ্রান্ড হোটেল মোড় থেকে আন্দোলনকারীরা একটি মিছিল নিয়ে গিয়ে সিটি বাজারের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর গুলি চালান। এ ঘটনায় গত বছর ১৩ নভেম্বর মহানগর কোতোয়ালি থানায় বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন আহত মামুনুর রশিদ। লিপি খান এ মামলার এজাহারভুক্ত ১৭৯ নম্বর আসামি।