ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য চালু উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা
রংপুর সিটি করপোরেশন ও জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৪৯০টি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য রংপুরে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে সরকারি পর্যায়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেখানে শিশুদের প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হবে। সিটি করপোরেশন ও জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৪৯০টি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিয়মিত তদারক করা হলে এ কার্যক্রমের সুফল মিলবে।
জেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে সাক্ষরতার হার গত ১০ বছরের ব্যবধানে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১১ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৫১ শতাংশ। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ বাস্তবতায় আজ আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালন করা হচ্ছে। ১৯৬৬ সালের ২৬ অক্টোবর ইউনেসকোর সাধারণ সম্মেলনে এ দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন জেলা প্রশাসক আসিব আহসান।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো রংপুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে ঝরে পড়া শিশুসহ হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যদের প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। রংপুর নগরে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৪০টি। যা চলতি বছর ১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় দুই পালায় ৩০ জন করে ৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। একই সঙ্গে সদর উপজেলা, কাউনিয়া, পীরগাছা, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলায় চলতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এই শিক্ষা কার্যক্রম। উপজেলায় প্রতিটি কেন্দ্রে একটি পালায় ৩০ জন শিক্ষার্থী। সব কেন্দ্রেই শিক্ষার্থীদের বয়স ৮ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। পাঁচটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে এসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। তাদের এ কার্যক্রম ২০২৩ সাল পর্যন্ত চলবে। প্রতিটি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন নারী শিক্ষক আছেন।
নগরের উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে একটি হলো বানিয়াপাড়া উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে বেসরকারি সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। এই সংস্থা নগরে ১১০টি স্কুল পরিচালনা করে। গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, দুই দিকে সারি করে মাদুর বিছিয়ে ক্লাস চলছে। ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৮ জন উপস্থিত। শিক্ষক চাঁদনী খাতুন বলেন,
কোনো কোনো দিন শিক্ষার্থী কম থাকলেও গড় উপস্থিতি ভালো।
হাসান আলী এই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। এই বিদ্যালয়ে পড়ার আগে সে এলাকার অন্য একটি বিদ্যালয়ে পড়েছে। কিন্তু করোনা মহামারির সময় স্কুলের পড়াশোনা বন্ধ হয়। তখন থেকে বাড়িতেই বসে ছিল। এই বিদ্যালয়ে পড়লে মাসে ৩০০ টাকা পাওয়া যায়। যা কাজে লাগে।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবা বেগমও এর আগে ওই এলাকার অন্য একটি বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছে। সেখানে পড়তে বেতন লাগত। বাবা-মা আগের বিদ্যালয় বাদ দিয়ে এখন নতুন করে এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছে। এখানে পড়তে কোনো টাকা লাগে।
বেসরকারি সংস্থা ‘পথ’ নগরের বাকি ৩০টি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে। পথ-এর নির্বাহী পরিচালক আলমগীর হোসাইন বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় দুই পালায় ৬০টি স্কুলে শিশুদের তাঁরা পড়ান। এ জন্য চার হাজার টাকার মধ্যে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছেন। শিশুদের
উপবৃত্তি ৩০০ টাকা দেওয়া হয় বিকাশের
মাধ্যমে। চলতি বছর জানুয়ারি মাস থেকে এই কর্মসূচি শুরু হলেও সরকারিভাবে এখনো আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়নি। তবে আশা করা যাচ্ছে চলতি মাসের মধ্যে শিক্ষকের বেতনসহ ঘর ভাড়ার টাকা পাওয়া যাবে।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) জেলা শাখার সভাপতি সদরুল আলম বলেন, শিশুরা পড়াশোনা শুরু করলেও দারিদ্র্যর কারণে ঝরে পড়ে। স্কুলে ভর্তি হয় ঠিকই, কখনো পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে কিংবা এরও আগে ঝরে পড়ে। সাক্ষরতার হার বাড়ানোর জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের তদারক খুব প্রয়োজন।
জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মোশফিকুর রহমান বলেন, শিক্ষকের বেতন ও ঘরভাড়া বকেয়ার বিষয়টি চলতি মাসেই সুরাহা হয়ে যাবে।
রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, শিশুরা যাতে ঝরে না পড়ে, এ জন্য সরকারি উদ্যোগে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এতে করে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আগের থেকে সাক্ষরতার হারও অনেক বেড়েছে।