যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের স্বর্ণের মুকুট চুরির ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৪
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের স্বর্ণের মুকুট চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ শনিবার মন্দিরের সেবায়েত জ্যোতি প্রকাশ চট্টোপাধ্যায় বাদী হয়ে শ্যামনগর থানায় মামলাটি করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) নির্দেশ দিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ সকালে ওই মন্দির পরিদর্শন করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার ও চুরি যাওয়া মুকুট উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন।
মুকুট চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। স্বর্ণের মুকুটটি যেন বিক্রয় অথবা কোনো স্বর্ণের দোকানে গলানো বা ধরন পরিবর্তন করতে না পারে, সে জন্য দোকানগুলোয় বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শ্যামনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তাইজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মুকুট চুরির ঘটনায় আজ সকালে মন্দিরের সেবায়েত জ্যোতি প্রকাশ চট্টোপাধ্যায় বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলাটি তদন্ত করছে জেলা ডিবি পুলিশ।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখনো মুকুট উদ্ধার হয়নি, তবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ব্যাপারটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তিনি গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নাম বলেননি।
এদিকে ঘটনার পর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও মুকুট উদ্ধার না হওয়ায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। বিশেষ করে হিন্দু-মুসলমান সবাই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। আজও সেখানে কোনো পূজা হয়নি। পুণ্যার্থীরা মন্দিরের সামনে থেকে চলে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
যশোরেশ্বরী কালীমন্দির সনাতন ধর্মের ৫২ পিটের এক পিট। ২০২১ সালের ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই কালীমন্দির পরিদর্শনে এসে নিজ হাতে কালীপ্রতিমার মাথায় সোনার মুকুটটি পরিয়ে দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে সেটি চুরি হয়ে যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের নামে হবে মিনি স্টেডিয়াম: ক্রীড়া উপদেষ্টা
দেশের বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হতে যাওয়া মিনি স্টেডিয়ামগুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের নামে হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
আজ শনিবার সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মিনি স্টেডিয়াম স্থাপনের জায়গা নির্ধারণের জন্য যান ক্রীড়া উপদেষ্টা। সেখানে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সাতক্ষীরার আসিফ হাসানের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘সাতক্ষীরার মাটি ও মানুষ দীর্ঘদিন স্বৈরাচারের কারণে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এখন সময় এসেছে এই জনপদকে এগিয়ে নেওয়ার। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিনিময়ে আজকের এই স্বাধীনতায় দেবহাটার শহীদ আসিফদের অবদানের কথা ভুলে গেলে হবে না। তাঁদের আমাদের প্রেরণা হিসেবে ধারণ করতে হবে। আমাদের যাঁরা জাতীয় বীর এবং যেসব শহীদ হয়েছেন, তাঁদের নামে স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হবে। এরই অংশ হিসেবে দেবহাটা উপজেলার মিনি স্টেডিয়ামের নাম হবে “শহীদ আসিফ স্টেডিয়াম”।’
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সাতক্ষীরাসহ সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রয়েছে। সাতক্ষীরা জেলাকে নিয়ে আগে যে কথা শোনা হতো, এসে দেখি তা নয়। এখানে মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কোনো ঘাটতি নেই। এ জেলার মানুষ অনেক শান্তিপ্রিয়। আগে সাতক্ষীরাকে ভিন্নভাবে দেখা হলেও, সেটি আর থাকবে না।’
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল হাসান, উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মহিউদ্দীন সিদ্দিকী, পারুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য আবিদ হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ফেয়ার মিশনের পরিচালক আবদুল কাদের মহিউদ্দীন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব খান চৌধুরী, দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইদ্রিসুর রহমান, দেবহাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি মীর খায়রুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই অনুষ্ঠানের পর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ মিনি স্টেডিয়াম স্থাপনের জায়গা, পারুলিয়া জেলিয়াপাড়া ও গাজীরহাট পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নিহত শহীদ আসিফ হাসানের কবর জিয়ারত ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমবেদনা জানান উপদেষ্টা। বিকেলে তিনি শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।