ওয়াসার গাড়িচালকের গৃহিণী স্ত্রীর রয়েছে পাঁচতলা বাড়িসহ অর্ধকোটি টাকা

ওয়াসার গাড়িচালক মো. তাজুল ইসলামছবি: সংগৃহীত

খাইরুন নেসা বেগম গৃহিণী। আয়ের উৎস না থাকার পরও তিনি চট্টগ্রাম নগরে একটি পাঁচতলা বাড়ির মালিক। শুধু তা–ই নয়, এই বাড়িসহ তাঁর রয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকার সম্পদ। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে উঠে এসেছে তাঁর স্বামী চট্টগ্রাম ওয়াসার গাড়িচালক (সাময়িক বরখাস্ত) মো. তাজুল ইসলামের অবৈধ আয়ে তিনি এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন।

তাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম ওয়াসা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। পাশাপাশি তিনি বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদকও। ১৯৮৯ সালে দুই হাজার টাকা বেতনে চট্টগ্রাম ওয়াসায় চালকের সহকারী (হেলপার) হয়ে চাকরি শুরু করেছিলেন তাজুল ইসলাম। সহকারী থেকে হয়েছেন গাড়িচালক। ধাপে ধাপে বেড়ে তাঁর বেতন হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু বেতন যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি বেড়েছে সম্পত্তি।

তাজুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আরও দুটি মামলা রয়েছে। দুর্নীতি ও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর দুই বছর আগে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

২০২২ সালের ৫ মার্চ তাজুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী খাইরুন নেসার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। তিন বছর তদন্ত শেষে চলতি মাসের শুরুতে আদালতে দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে তাজুলের স্ত্রীর কোনো আয়ের উৎস পাওয়া যায়নি। স্বামীর অবৈধ আয়কে বৈধ করার জন্য স্ত্রীকে পোলট্রি খামারি সাজানো হয়।

চট্টগ্রাম নগরের পশ্চিম শহীদনগর এলাকায় তাজুল ইসলামের স্ত্রীর নামে করা পাঁচতলা বাড়ি
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম শহরের ব্যস্ততম এলাকা রৌফাবাদের পাশেই পশ্চিম শহীদনগর এলাকা। এলাকার তৈয়্যবিয়া হাউজিং সোসাইটির সরু গলি ধরে কিছু দূর গিয়েই চোখে পড়ে তাজুলের পাঁচতলা বাড়িটি। সেখানে ১৭টি ফ্ল্যাট রয়েছে।

দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, তাজুল স্ত্রী ও নিজের নামে নগরের রৌফাবাদ এলাকায় ২০০২ সালে তিন শতক জায়গা কিনে পাঁচতলা বাড়ি করেন। অথচ তাঁর গৃহিণী স্ত্রীর আয়ের কোনো উৎস নেই। নিজের অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থকে বৈধতা দিতে স্ত্রীর নামে জমি কিনে পাঁচতলা বাড়ি করেন তাজুল। বাড়িটির অর্ধেক নির্মাণ ব্যয় দেখান তাঁরা—২৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা। কিন্তু তদন্তে দুদক গণপূর্ত চট্টগ্রামের তিনজন উপপ্রধান প্রকৌশলীর মাধ্যমে নিরপেক্ষ পরিমাপ করে পায় ৩৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ব্যাংকে নগদ টাকাসহ অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায় আরও ২১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে মোট ৫৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ পায় দুদক।

জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সব তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তাঁর স্ত্রীর ব্যবসা থেকে করা আয়ে বাড়ি করেছেন।

আয়কর নথিতে স্ত্রী খাইরুন নেসাকে পোলট্রি খামারি দেখানো হলেও বাস্তবে দুদক এর কোনো অস্তিত্ব পায়নি। ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, নিয়োগ-বাণিজ্য, তদবির, পদোন্নতি ও বদলিতে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে তাজুল ইসলাম অর্থ আয় করেছেন। চাকরিজীবনের শুরু থেকেই তিনি এসবে জড়িয়ে যান। পরে অবৈধভাবে অর্জিত টাকা দিয়ে জায়গা কিনে দুই দশক আগে বাড়ি করেন।

স্বল্প বেতনের একজন গাড়িচালক হয়ে তাজুল কীভাবে বাড়ির মালিক হলেন, তা নিয়ে ওয়াসার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যেই আলোচনা আছে। কারণ, সর্বশেষ ১৬তম গ্রেডে সব মিলিয়ে তিনি বেতন পেতেন ৩৫ হাজার টাকা।

দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাজুল ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে আজ বুধবার। আসামি স্বামী-স্ত্রী দুজন বর্তমানে এই মামলায় জামিনে রয়েছেন।