‘ঝুড়ির গ্রাম’: যেখানে শতবর্ষ ধরে জীবন চলে বাঁশের ঝুড়ি বানিয়ে

ফরিদপুর সদর উপজেলার চাঁদপুর মল্লিকপাড়া গ্রামের শতাধিক পরিবার বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি বানিয়ে জীবিকা চালায়ছবি: প্রথম আলো

১০০ বছরের বেশি সময় ধরে বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি বানানো হয় ফদিরপুর সদর উপজেলার চাঁদপুর মল্লিকপাড়া গ্রামে। এখনো এখানকার শতাধিক পরিবার এই কাজ করে জীবন চালায়।

গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাঁদপুর মল্লিকপাড়া গ্রামের পূর্ব দিকে বটতলা থেকে পশ্চিম দিকে আজিজ মাস্টারের মসজিদ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় যতগুলো পরিবার বসবাস করে, তারা সবাই ঝুড়ি বানানোর সঙ্গে যুক্ত। যুগের পর যুগ ধরে তারা এই কাজ করে আসছে।

সম্প্রতি চাঁদপুর মল্লিকপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, উঠানে, বারান্দায়, রাস্তার ধারে, দোকানের সামনে বসে ঝুড়ি তৈরি করছেন শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা। গ্রামের রাস্তায় বিক্রির জন্য ভ্যানে করে বাঁশ নিয়ে এসেছেন বাঁশ ব্যবসায়ী। বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে ঘুরে ঝুড়ি কিনতে দেখা যাচ্ছে বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীদের।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ছবেদ মল্লিক বলেন, তিনি ছোটবেলায় তাঁর বাবার কাছ থেকে এই ঝুড়ি তৈরির কাজ শিখেছিলেন। এই ঝুড়ি তৈরি করেই তাঁর সংসার চলে। তিনি ও তাঁর স্ত্রী মিলে প্রতি সপ্তাহে ছোট-বড় মিলে ৬০ থেকে ৭০টি ঝুড়ি তৈরি করতে পারেন। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি সপ্তাহে তাঁদের আয় হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।

একই এলাকার বাসিন্দা আবদুল মান্নান মল্লিক বলেন, তাঁর কিছু কৃষিজমি আছে। তিনি জমিতে চাষাবাদের পাশাপাশি ঝুড়ি তৈরির কাজ করেন। ঝুড়ি বানিয়ে সপ্তাহে তাঁর আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা আয় হয়। তিনি বলেন, সারা বছর ধরে এই কাজ চললেও বছরের অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাঁশের ঝুড়ির চাহিদা থাকে বেশি। ওই সময় ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো ঝুড়ি সরবরাহ করতে তাঁদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।

বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে এসে বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি তৈরির কাজ শিখেছেন বলে জানালেন গৃহবধূ ফরিদা বেগম। তিনি বলেন, ঝুড়ি তৈরি করার জন্য যে বাঁশ ব্যবহার করা হয়, তা স্থানীয়ভাবে ‘তল্লা বাঁশ’ নামে পরিচিত। প্রতিটি বাঁশ ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়। একটি বাঁশ থেকে আকারভেদে এক থেকে চারটি ঝুড়ি তৈরি করা যায়। আকারভেদে প্রতিটি ঝুড়ি ৯০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

প্রায় ১৮ বছর ধরে চাঁদপুর মল্লিকপাড়া গ্রাম থেকে ঝুড়ি কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে আসছেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট এলাকার আতিয়ার খালাসী। তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে এই গ্রাম থেকে এক হাজার থেকে দেড় হাজার ঝুড়ি সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর এগুলো মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। প্রতিটি ঝুড়িতে সব খরচ বাদে তিনি ১৫ থেকে ২০ টাকা লাভ করেন। এখানকার ঝুড়ির মান ভালো। তাই বিভিন্ন জেলায় এর কদর আছে।

ঈশানগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, চাঁদপুর মল্লিকপাড়া গ্রামে বানানো বাঁশের ঝুড়ি এই এলাকার একটি ঐতিহ্য। তাদের কারণে গ্রামের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন জেলায়। লোকে এখন ওই গ্রামকে বলে ‘ঝুড়ির গ্রাম’।