‘আমার মুনে কয়, পেটে গুলি থাকায় আমার বাবা কবরে কষ্ট পাইতাছে’

ছেলে সাদিকুরের ছবি বুকে জড়িয়ে তাঁর স্মৃতিচারণা করছিলেন মা শাহনাজ বেগম। সম্প্রতি তোলাছবি: সংগৃহীত

‘আইজক্যা দেড় মাস অইলো আমার বাবা শহীদ অইছে। পুলিশের করা গুলি পেটে নইয়া (নিয়ে) আমার বাবা কবরে শুইয়া রইছে। আমার মুনে কয়, পেটে গুলি থাকায় আমার বাবা কষ্ট পাইতাছে।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মাদ্রাসাশিক্ষার্থী সাদিকুর রহমানের (২১) মা শাহানাজ বেগম বিলাপ করতে করতে এসব বলছিলেন। মনে হলেই সন্তানের ছবি বুকে আঁকড়ে ধরে কবরের পাশে চলে যান। সেখানে দাঁড়িয়ে সন্তানের কথা ভাবেন আর কাঁদেন।

সাদিকুর রহমানের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের ফুলমালীচালা গ্রামে। তাঁর বাবা লুৎফর রহমান কুয়েতপ্রবাসী। আর মায়ের নাম শাহানাজ বেগম। সাদিক ঢাকার আব্দুল্লাহপুরে জামিয়া দ্বীনি ইসলামিয়া মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে নিহত হন তিনি।

সাদিকুরের মামা আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, সাদিকুর তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে উত্তরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেন। বিকেল পাঁচটার দিকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ওই সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে সাদিকুর রাস্তায় ঢলে পড়েন। পরে আন্দোলনকারীরা একটি রিকশায় করে আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। স্বজনেরা কেউ না থাকায় লাশ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছিল।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাদিকুরকে না পেয়ে ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর মাকে নিখোঁজের বিষয়টি জানায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও খোঁজাখুঁজি করা হয়। পরদিন খবর আসে, আন্দোলনে গিয়ে নিহত হয়েছেন সাদিকুর। পরে ২১ জুলাই সকালে তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়

সাদিকুরের পিঠে একটি গুলির চিহ্ন ছিল জানিয়ে তাঁর চাচা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘গুলি পিঠ ভেদ করে নাভির পাশে আটকে ছিল। লাশের পেটে গুলির অস্তিত্ব (বুলেট) সবাই দেখেছে।’

সাদিকুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

নিহত সাদিকুররা তিন ভাই। বড় ভাই শামীম আহমেদ এক বছর আগে রোজগারের উদ্দেশে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। আর ছোট ভাই শাহেদ স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

সাদিকুরের মা শাহানাজ বেগম বলেন, সাদিকুর কোরআনের হাফেজ ছিলেন। বড় মাওলানা হওয়ার আশায় ঢাকার আব্দুল্লাহপুরে ওই মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিলেন ছেলে। তবে সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে।

পরিবারটিকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান সাগরদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার। তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে পরিবারটিকে বেশ কিছু নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় মামলা করতে চান কি না, জানতে চাইলে সাদিকুরের মা শাহানাজ বেগম বলেন, অনেকেই তাঁকে কল করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে মামলা করতে বলছেন। তবে মামলা করবেন কি না, এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।