নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্যের (এমপি) ছেলের বিপক্ষে নির্বাচনের মাঠে কাজ করায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা উজ্জ্বল চন্দ্র শীলের (৪৮) ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার হারিছ চৌধুরী বাজারে স্থানীয় চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইফুল্যাহ খসরু ও তাঁর লোকজন এই হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
ভুক্তভোগী উজ্জ্বল চন্দ্র শীলের অভিযোগ, হামলাকারীরা তাঁকে (উজ্জ্বলকে) এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মেরে জখম করেছেন। পরে তিনি স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত সাইফুল্যাহ খসরু সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরীর সমর্থক। আতাহার ইশরাক নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নিষেধ সত্ত্বেও তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়ছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী (সেলিম)। তিনি লড়ছেন দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে। নির্বাচনের মাঠে তাঁর পক্ষে কাজ করছেন উজ্জ্বল চন্দ্র শীল।
এদিকে উজ্জ্বল চন্দ্র শীলের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সুবর্ণচরের চরজব্বার থানার মোড়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়। সুবর্ণচরের শান্তিপ্রিয় সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে গতকাল বেলা ১১টার দিকে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। বক্তব্য দেন সুবর্ণচর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোহন মজুমদার, উৎপল চন্দ্র মজুমদার, সুবর্ণচর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাঞ্চন মজুমদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন উজ্জ্বল চন্দ্র শীল। এ কারণে গতকাল বিকেলে চরজুবলী ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল্যাহ খসরু নেতৃত্বে উজ্জ্বল চন্দ্র শীলের ওপর হামলা চালানো হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাই হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান খসরুসহ তাঁর সহযোগীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
হামলার শিকার উজ্জ্বল চন্দ্র শীল বলেন, তিনি সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে খায়রুল আনম চৌধুরীর দোয়াত-কলম প্রতীকের পক্ষে কাজ করছেন। এতে ক্ষুব্ধ হন অপর প্রার্থী সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরীর অনুসারীরা। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি হারিছ চৌধুরী বাজারে গেলে চরজুবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল্যাহ খসরুসহ তাঁর লোকজন অতর্কিত তাঁর ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁকে (উজ্জ্বলকে) এলোপাতাড়ি কিলঘুষি ও লাথি মেরে গুরুতর জখম করা হয়েছে।
উজ্জ্বল চন্দ্র শীল আরও বলেন, এমপি পুত্রের বিপক্ষে ভোটের মাঠে কাজ করার কারণেই তাঁর ওপর হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা হামলার সময় তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেছেন এবং দোয়াত-কলমের পক্ষে কোথাও কাজ করলে হত্যার হুমকিও দেন। হামলার ঘটনার পর থেকে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ ঘটনায় তিনি এরই মধ্যে চরজব্বার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুল্যাহ খসরু প্রথম আলোকে বলেন, উজ্জ্বল চন্দ্র শীলের ওপর হামলার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারও ওপর হামলা বা কাউকে মারধরের অতীত কোনো রেকর্ড তাঁর নেই। উজ্জ্বল চন্দ্রের ওপর হামলার কোনো ভিডিও যদি কেউ দেখাতে পারেন, তাহলে তাঁকে যে শাস্তি দেওয়া হয়, তা তিনি মাথা পেতে নেবেন। তাঁকে (সাইফুল্যাহকে) সামাজিকভাবে হেয় করতেই মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উজ্জ্বল চন্দ্র শীল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দোয়াত-কলমের সমর্থক। আর চেয়ারম্যান সাইফুল্যাহ খসরু আনারস প্রতীকের সমর্থক। তাঁদের দুজনের মধ্যে হারিছ চৌধুরী বাজারে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। উজ্জ্বল চন্দ্র শীল থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ তদন্তের জন্য একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিধি অনুযায়ী, পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।