গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে জাপা প্রার্থীর সাক্ষাৎকার
পুনরায় ভোট হলে অংশ নেব কি না, দলের সিদ্ধান্তের বিষয় আছে
গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনের দিন (বুধবার) দুপুরবেলা পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে চারজনই ভোট বর্জন করেন। এরপর অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন কমিশন ৪৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে। পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বন্ধ ঘোষণার পর চলছে আলোচনা–সমালোচনা। নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত প্রার্থী এ এইচ এম গোলাম শহীদ কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর গাইবান্ধা প্রতিনিধি শাহাবুল শাহীন।
প্রশ্ন :
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন উপনির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। আপনি কি মনে করেন ভোট সুষ্ঠু হয়েছে?
গোলাম শহীদ: নির্বাচন সুষ্ঠু কীভাবে হলো? আসনটির মোট ১৪৫টি কেন্দ্রের মধ্যে আমার শতাধিক কেন্দ্রের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। সরকারি দলের কর্মী–সমর্থকেরা নৌকা প্রতীকসংবলিত টি-শার্ট পরে ভোটারদের আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোটটা দিয়ে দেয়। বিষয়টি সিসিটিভি ক্যামেরায় সিইসি দেখতে পান। এ কারণে নির্বাচন কমিশন ঢাকা থেকে নির্দেশ দেন ভোট গ্রহণ স্থগিত করতে।
প্রশ্ন :
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অভিযোগ, কেন্দ্র স্থগিতের পেছনে আপনার ষড়যন্ত্র আছে। আপনি কী বলবেন?
গোলাম শহীদ: অভিযোগটি সঠিক নয়। কারণ, নির্বাচন কমিশন সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখে, নির্বাচন তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তাই তারা ঢাকা থেকে প্রথমে ভোট গ্রহণ স্থগিত ও পরে নির্বাচন বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়। এটা দিবালোকের মতো সত্য।
প্রশ্ন :
ভোটকেন্দ্রে যারা প্রভাব বিস্তার করে, তাদের আপনি চেনেন না। তাহলে কীভাবে বলছেন, তারা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী?
গোলাম শহীদ: আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকেরা নৌকা প্রতীকসংবলিত টি-শার্ট পরে ১৫ দিন আগে থেকেই প্রচারণা চালাচ্ছে। তারাই ভোটের দিন প্রভাব বিস্তার করে নৌকায় ভোট নেয়। এ ছাড়া চারজন প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেওয়ার পর কেন্দ্রে কোন দলের লোক থাকে? এটা বোঝা যায়, তারাই কেন্দ্রে ছিল। সব অনিয়ম তারাই করেছে।
প্রশ্ন :
আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংবাদ সম্মেলনে বলছেন, নৌকা প্রতীকসংবলিত টি-শার্ট ষড়যন্ত্র করে জাপার প্রার্থী সরবরাহ করেছেন। আপনার মন্তব্য কী?
গোলাম শহীদ: ষড়যন্ত্র করে টি-শার্ট দেব কেন? নির্বাচনের শুরু থেকেই টি-শার্ট পরে যারা মিছিল–মিটিং করে বেড়িয়েছে, প্রচারণা চালিয়েছে, গণসংযোগ করেছে; সেগুলো বিবেচনা করলেই এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে, টি-শার্ট পরিহিতরা কারা। যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রশ্ন :
নির্বাচনের দিন যেসব বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, এ বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা কী দেখেছেন?
গোলাম শহীদ: প্রশাসনের নীরব ভূমিকা ছিল। তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। আমরা প্রতিকার চেয়েও পাইনি। এ ছাড়া অভিযোগগুলো রিটানিং কর্মকর্তা, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের বলা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকেও কোনো প্রতিকার পাইনি। তাঁরা শুধু বলেছেন, ‘দেখছি।’
প্রশ্ন :
অভিযোগ উঠেছে, পরাজয় জেনে এবং নৌকার গণজোয়ার দেখে আপনারা ভোট বর্জন করেছেন। আপনি কী বলেন?
গোলাম শহীদ: প্রশ্নই ওঠে না। তারা (আওয়ামী লীগ) তো ভোটের পরিবেশই রাখেনি। নির্বাচন কমিশন আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ভোট সুষ্ঠু হবে এবং প্রতি বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। তা দেখে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। আমরা সকাল থেকেই যখন বিভিন্ন কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম, জোর করে ভোট নিয়ে নেওয়া, প্রভাব বিস্তার দেখলাম; তখন নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে দুপুরে একযোগে ভোট বর্জন করি।
প্রশ্ন :
নির্বাচন কমিশনের উপনির্বাচন বন্ধের সিদ্ধান্ত আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখছেন?
গোলাম শহীদ: উপনির্বাচন বন্ধের সিদ্ধান্তে আমরা নির্বাচন কমিশনকে সাধুবাদ জানাই। যারা এক প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে, যার কারণে এ নির্বাচন বাতিল হলো, এর কারণে প্রার্থীসহ আমরা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলাম, এর দায়ভার নিতে হবে এবং এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রশ্ন :
পুনরায় ভোট গ্রহণ হলে যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হবে, সে বিষয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
গোলাম শহীদ: আমরা মোটেই আশাবাদী নই। কারণ, এই পরিবেশের মধ্যে দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আমি আশাবাদী নই। পুনরায় ভোট গ্রহণ হলে তাতে অংশ নেব কি না, সেটি দলের সিদ্ধান্তের বিষয় আছে। পরবর্তী সময়ে আমরা নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।