চুরির সময় দেখে ফেলায় সাংবাদিকের মা–বাবাকে পিটিয়ে জখম: ফরিদপুরের পুলিশ সুপার

সাংবাদিক সৌগত বসুর করা মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলন করেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

‘চুরির সময় চোরকে দেখে ফেলায়’ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় সাংবাদিক সৌগত বসুর মা-বাবাসহ তিনজনকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।

পুলিশ সুপার বলেন, এই তিনজনকে পিটিয়ে আহত করেছেন পল্লব কুমার রায় (১৯) নামের এক তরুণ। তাঁদের কোপ দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটি কোনো ডাকাতির ঘটনা নয়, কিংবা এ ঘটনার পেছনে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। গ্রেপ্তার হওয়া পল্লব গতকাল রোববার আদালতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রামে আজকের পত্রিকা-এর ঢাকার নিজস্ব প্রতিবেদক সৌগত বসুর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সৌগত বসুর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামলেন্দু বসু (৬৫), মা কাকলী বসু (৬০) ও প্রতিবেশী কিশোরী প্রীতি মালো (১৫) আহত হন। এ ঘটনায় শনিবার সৌগত বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে চুরির অভিযোগে একটি মামলা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল বলেন, মামলা হওয়ার পর শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে পল্লব কুমার রায়কে ডুমাইন খেয়াঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার আদালতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন পল্লব। ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে তিনি আদালতকে বলেছেন, নেশা করার টাকা সংগ্রহ করার জন্য চুরির উদ্দেশ্যে ওই বাড়িতে প্রবেশ করেন। বাড়ির মালিক শ্যামলেন্দু বসু তাঁকে দেখে ফেলায় ওই তিনজনকে একটি স্টিলের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পালিয়ে যান। পরে আদালতের নির্দেশে পল্লবকে গতকাল রাতে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তার পল্লব মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের বটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গাঁজা সেবন করেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে আগে চুরির কোনো অভিযোগ ছিল না সংবাদ সম্মেলনে জানান পুলিশ সুপার।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শৈলেন চাকমা, সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) ইমরুল হাসান, মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুজ্জামান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মোক্তার হোসেনসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জখম হওয়া কাকলী বসু ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবারের ছবি
ছবি: সংগৃহীত

বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামলেন্দু বসু ও তাঁর স্ত্রী কাকলী বসু বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। সৌগত বসু প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া পল্লব এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাঁদের নাম পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা বর্তমানে সপরিবার আত্মগোপনে আছেন। কিন্তু পুলিশ তা আমলে নেয়নি। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে পুলিশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও পরের দিকে যোগাযোগ করেনি।’

সৌগত বসুর বক্তব্যের বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল বলেন, বাদী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন। পুলিশ তদন্ত করে যা পেয়েছে, তার ভিত্তিতেই আসামি শনাক্ত করা হয়েছে। আলামতও উদ্ধার করা হয়েছে। আসামি দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।

আরও পড়ুন