দিনাজপুরে শিয়ালের কামড়ে ১২ জন আহত, গৃহবধূ হাসপাতালে ভর্তি
সন্ধ্যার কিছু সময় আগে বাড়ির অদূরে পুকুরপাড় থেকে জ্বালানি কাঠ আনতে গিয়েছিলেন পূর্ণিমা রানী রায় (৩৮)। এ সময় একটি শিয়াল একটি ছাগলকে তাড়া করে। শিয়ালের তাড়া খেয়ে পুকুরে পড়ে যায় ছাগলটি। পরে শিয়ালের আক্রমণের শিকার হন পূর্ণিমা রানী নিজেও। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন পূর্ণিমা। কিছু সময় পরে জ্ঞান ফিরলে পূর্ণিমা দেখেন, তাঁর দুই হাতের কনুইয়ের ওপর থেকে মাংস ছিঁড়ে নিয়েছে শিয়াল।
দিনাজপুর সদর উপজেলার উথরাইল ইউনিয়নের রামপুর বেঙ্গরদিঘী এলাকায় গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। পূর্ণিমা রানী ছাড়াও ওই এলাকায় শিয়ালের আক্রমণের শিকার হয়েছেন জগেন রায়ের ছেলে মানিক রায় (৩৫), শান্তনু রায়ের ছেলে বকুল রায়সহ (১৭) মোট ১২ জন। আহতদের মধ্যে চারজন দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা (অ্যান্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিন) নিয়ে বাড়িতে গেছেন। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন পূর্ণিমা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় সার্জারি ওয়ার্ডে দেখা যায়, বেডে শুয়ে আছেন পূর্ণিমা। তাঁর দুই হাতে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। পাশে বসা একমাত্র বোন সাথী রানী। পূর্ণিমা বলেন, সন্ধ্যায় খড়ি আনতে পুকুরপাড়ে গিয়েছিলেন তিনি। পরে শিয়ালের আক্রমণের শিকার হন। তাঁর দুই হাতে কামড় দিয়েছে শিয়াল। বাঁ হাতের কনুইয়ের ওপরের মাংস তুলে নিয়েছে। তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলেন।
মুখের মধ্যে শিয়াল কামড় দিয়েছে মানিক রায়ের। ঠোঁটের এক পাশ ছিঁড়ে গেছে তাঁর। মুঠোফোনে মানিক বলেন, দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। একই সময়ে তাঁরাও ওই শিয়ালের কবলে পড়েন। মেয়েরা রক্ষা পেলেও তিনি আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাননি। তিনি বলেন, ‘আমরা ছাড়াও গতকাল গ্রামের ১২ জন পাগলা শিয়ালের আক্রমণের শিকার হয়েছি।’ মানিক আরও বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছি। কিন্তু এখানে টিকা নেই। নিজের টাকায় টিকা কিনতে হয়েছে। মোট তিনটি টিকা দিয়েছি। তাতে খরচ পড়েছে তিন হাজার টাকা।’
শুধু শিয়ালের কামড়ই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে দিনাজপুরে কুকুর ও বিড়ালের উপদ্রবও বেড়েছে—এমনটাই জানান হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ওয়াসিম আলী। তিনি বলেন, কুকুরের উপদ্রব অনেক বেড়েছে। মানুষ এমনভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন, কারও কান ছিঁড়ে নিয়েছে, কারও পায়ের মাংস তুলে নিয়েছে, কারও চোখ ও ঠোঁটে বড় রকমের আক্রমণের শিকার হয়েছে। হাসপাতালের রেজিস্ট্রার দেখে জানান, প্রতিদিন গড়ে ৯০ থেকে ১০০ জনকে কুকুর, বিড়াল ও শিয়ালের টিকা দেওয়া হচ্ছে। আজ বেলা ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টিকা দিয়েছেন ২০ জনকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) পারভেজ সোহেল রানা বলেন, ‘কুকুর, শিয়াল কিংবা বিড়ালের আক্রমণের শিকার হলে তিন ক্যাটাগরিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সাধারণ ক্ষত ক্যাটাগরি-১ নির্ণয় হলে তেমন ভ্যাকসিন প্রয়োজন পড়ে না। ক্যাটাগরি-২-এর ক্ষেত্রে এআরভি টিকা (অ্যান্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিন) এবং ক্যাটাগরি-৩-এর ক্ষেত্রে এআরভি ও আরআইজি (র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবুলিন) ভ্যাকসিন দিতে হয়। আমাদের হাসপাতালে এআরভি ভ্যাকসিন সরবরাহ থাকলেও আরআইজি ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই। যদিও অধিকাংশ আক্রান্ত ব্যক্তিই ক্যাটাগরি-৩ পর্যায়ের।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুর পৌরসভার বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নুরে আলম বলেন, কুকুর নিধন করা যাবে না—হাইকোর্টের এ রকম একটি নির্দেশনা আছে। তবে জলাতঙ্ক রোগের টিকা ও কুকুরের জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ে পৌরসভা কাজ করে থাকে। খোঁজ নিয়ে খুব দ্রুতই এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।