অবৈধ তল্লাশিচৌকি বসিয়ে টাকা আদায়, এসআই প্রত্যাহার ও সোর্স গ্রেপ্তার

পুলিশের ভেস্ট পরা পারভেজ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

এক উপপরির্দশক (এসআই) তাঁর একজন সোর্সকে নিয়ে অবৈধভাবে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছিলেন। যানবাহন থামিয়ে তাঁরা টাকা আদায় করছিলেন। পরে স্থানীয় লোকজন ওই সোর্সকে ধরে পিটুনি দিয়েছেন। গতকাল বুধবার রাতে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার হালির মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় পুলিশের সোর্স পারভেজ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার চকবেনী গ্রামে। তিনি জয়পুরহাট আদালতে এক আইনজীবীর সহকারী হিসেবেও কাজ করেন। এ ছাড়া আক্কেলপুর থানার এসআই ইউনুছ আলীকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগ পেয়ে গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে আক্কেলপুর থানায় আসেন জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘খবর পেয়ে রাতেই থানায় গিয়েছিলাম। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। দুজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আক্কেলপুর-জয়পুরহাট সড়কে আক্কেলপুর পৌর শহরের কেসের মোড় এলাকায় রাতে প্রায়ই চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। গতকাল সন্ধ্যায় থানার এসআই ইউনুছ আলী কেসের মোড়ে তল্লাশিচৌকি বসান। এসআই ইউনুছ আলী সাদাপোশাকে ছিলেন। সঙ্গে তাঁর সোর্স পারভেজ হোসেন পুলিশের রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট পরেছিলেন। পারভেজ হোসেন ব্যাটারিচালিত ভ্যান, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল থামিয়ে চালকদের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছিলেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে আক্কেলপুর পৌর শহরের দিক থেকে একটি মোটরসাইকেল জয়পুরহাটে দিকে যাচ্ছিল। মোটরসাইকেলের চালক দ্রুতগতিতে তল্লাশিচৌকি পার হয়ে যান।

এক মিনিট পরই তল্লাশিচৌকিতে আরেকটি মোটরসাইকেল আসে। ওই মোটরসাইকেলে রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট পরা পারভেজ সামনের মোটরসাইকেলটিকে ধাওয়া করেন। হালির মোড়ে পৌঁছার পর পারভেজকে নেমে যেতে বলেন মোটরসাইকেলের চালক। তখন পারভেজ পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে মোটরসাইকেল চালককে মারধর করার চেষ্টা করেন। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। তাঁরা পারভেজের কাছে পুলিশের পরিচয়পত্র দেখতে চান। তিনি তখন পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি এবং এক পর্যায়ে স্বীকার করেন তিনি পুলিশ সদস্য নন। এ সময় উত্তেজিত জনতা তাঁকে আটকে রেখেন মারধর করেন। খবর পেয়ে কেসের মোড় থেকে এসআই ইউনুছ আলী বাঁশি বাজাতে বাজাতে হালির মোড়ে ছুটে আসেন। লোকজন তখন এসআই ইউনুছ আলীকেও মারধর শুরু করেন। পরে থানা-পুলিশের একটি দল ওই দুজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে গতকাল রাতে এসআই ইউনুছ আলী বলেন, ‘পারভেজ পুলিশের সোর্সের কাজ করেন। আমি তাঁকে ডেকে আনিনি। পুলিশের রিফ্লেক্টিভর ভেস্ট পরে মোটরসাইকেল ধাওয়া করতে গিয়ে লোকজনের হাতে ধরা পড়েছিল। তাঁকে রক্ষা করতে গিয়ে আমিও উত্তেজিত জনতার মারধরের শিকার হয়েছি।’

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিলাম। থানায় পৌঁছে নকল পুলিশ আটকের খবর পাই। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে এনেছি। যে ভ্যান আটকিয়ে রেখেছিল, সেই ভ্যানচালক বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন।’