মানিকগঞ্জ থেকে মাইক্রোবাসে করে সিলেটে বেড়াতে এসেছিলেন আরিফুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পরিবারের তিনজন। এ ছাড়া ওই মাইক্রোবাসে মানিকগঞ্জের আরও ১০ জন ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে পৌঁছে তাঁরা ফজরের নামাজ আদায় শেষে মাজার জিয়ারত করেন। সেখান থেকে ভোলাগঞ্জের সাদাপাথরে যাওয়ার জন্য রওনা দেন।
ভ্রমণের ক্লান্তিতে মাইক্রোবাসে থাকা সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ একটা বিকট শব্দ শুনতে পান আরিফুল। পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের পাশের খাল পড়ে যায় তাঁদের বহন করা মাইক্রোবাসটি। আর এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন সাতজন। আজ সকাল আটটার দিকে কোম্পানীগঞ্জের খগাইলসংলগ্ন গোয়াইনঘাট উপজেলার পিয়াইনগুল কাজী কলিমুল্লাহ উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ছয়জন যাত্রী ও মাইক্রোবাসটির চালক মারা যান। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অপর চারজন।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন মো. ইদ্রিস আলী (৪০), কাজী আমির উদ্দিন (৫০), মো. কালন মিয়া ও তাহের। নিহত তাহের মাইক্রোবাসের চালক। তাঁর বাড়ি ঢাকার রায়েরবাজারে। নিহত বাকি তিনজনের বাড়ি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়।
দুর্ঘটনার পর আরিফুল ইসলাম আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় বড় ভাইয়ের বুকের এক্স-রে করাচ্ছিলেন। এ সময় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আরিফুল বলেন, মাইক্রোবাসে থাকা সবাই ঘুমিয়েছিলেন। চলন্ত মাইক্রোবাসে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান, মুহূর্তের মধ্যে বুঝতে পারেন তাঁরা সড়কের পাশের খালের পানিতে পড়ে আছেন। তিনি ও অন্যরা পানি থেকে মাইক্রোবাসের যাত্রীদের উদ্ধার করেন। আশপাশের লোকজনও তাঁদের উদ্ধারে সহযোগিতা করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসেন। পানি থেকে উঠে তিনি সড়কের পাশে সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীদের লাশ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকতে দেখেন।
আরিফুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনায় তাঁর ভাই সোলেমান, আট বছর বয়সী ভাতিজা ও পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে আহত হয়েছেন। তাঁদের ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ বলেন, মাইক্রোবাসের সামনের ডান পাশের চাকা ফেটে গেছে। চাকা ফেটে গেলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। কোম্পানীগঞ্জ থেকে আসা মাইক্রোবাসটি সিলেটমুখী সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। নিহত ব্যক্তিদের লাশ সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।